প্রাণঘাতী ঝুঁকি নিয়েই চলছে দুই সিটির অধিকাংশ মার্কেট
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ১১৫টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের অধিকাংশই সিটি করপোরেশন গঠনের পরপর গড়ে তোলা। এর মধ্যে কোনো কোনো মার্কেট বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা হয়েছে। কিছু মার্কেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। আরও কিছু মার্কেট আসছে ঈদের পর ভেঙে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। আবার আদালতের স্থিতাবস্থা থাকায় কিছু মার্কেট ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ১১৫টি মার্কেটের মধ্যে অধিকাংশই চলছে অগ্নিঝুঁকি ও ধসে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে। এতে করে যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মার্কেটে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নগর কর্তৃপক্ষ কোনো অজুহাতেই এর দায় এড়াতে পারবে না।
ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৮৬৪ সালে। এরপর একের পর এক মার্কেট নির্মাণ করা হয়। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা সিটি উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৭২টি মার্কেট রয়েছে; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) রয়েছে ৪৩টি। এগুলোর মধ্যে দুই সিটির অধিকাংশ মার্কেটই ঝুঁকিপূর্ণ।
এসব মার্কেট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সিটি করপোরেশন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে- এটাই বিধিবদ্ধ নিয়ম। সেই মোতাবেক, নিজেদের মালিকানাধীন মার্কেটের পাশাপাশি নগরীর আওতাভুক্ত অন্যান্য মার্কেটের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে তারা। এখন, তাদের মার্কেটই যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে তো আরও সব মার্কেট ঝুঁকিমুক্ত রাখতে তাদের যে দায়, সেটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
বিশিষ্ট এই পরিকল্পনাবিদ বলেন, ঢাকা নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর কোনোটিতে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তবে সে দায় কোনোভাবেই ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারবে না। এ জন্য চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট দ্রুত পুনর্নির্মাণ করা দরকার। যেগুলোতে আদালতের নির্দেশ রয়েছে, সেগুলোর জন্য সিটি করপোরেশনের পরীবিক্ষণ দরকার। দেখতে হবে, সেগুলো সত্যিকার অর্থে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হলে আইনগতভাবে লড়াই করতে হবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেট, কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গত এক বছরের মধ্যেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছেন অসংখ্য ব্যবসায়ী। অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত ডিএসসিসির আওতাধীন বঙ্গবাজারে আধুনিক বিপণিবিতান নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ডিএনসিসির আওতাধীন মোহাম্মদুপর কৃষি মার্কেটেও গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন।
ডিএসসিসির মালিকানাধীন ৭২টি মার্কেটের মধ্যে ঢাকেশ্বরী মার্কেট, নিমতলী মার্কেট, ২৯নং ওয়ার্ডের ইসলামবাগ স্টাফ কোয়ার্টারের ছয়তলা মার্কেট, ২নং পলাশী মার্কেট, বঙ্গবন্ধু হকার্স মার্কেট- এই পাঁচটি চরম ঝুঁকিতে থাকায় ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মৌচাক মার্কেট ও মডার্ন ম্যানশনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও আদালতের স্থিতাদেশ থাকায় ভাঙতে পারেনি নগর কর্তৃপক্ষ।
যদিও ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) খায়রুল বাকের আমাদের সময়কে বলেছেন, দক্ষিণ সিটিতে যেসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, সেগুলোর অধিকাংশই ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিছু মার্কেটে আদালতের আদেশ থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
তথ্য বলছে, ডিএনসিসির ৪৩টি মার্কেটের ১৯টির অবস্থাই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এসব মার্কেট ভেঙে নতুন করে গড়তে হবে। এরই মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো ভেঙে ফেলতে ভাড়াটিয়া দোকান মালিকদের চিঠি ইস্যু করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো হচ্ছে- খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেট, গুলশান উত্তর পাকা মার্কেট, গুলশান উত্তর কাঁচা মার্কেট, গুলশান দক্ষিণ পাকা মার্কেট-১, প্রান্তিক সুপার মার্কেট গাবতলী, মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজার ১ম ও ২য়, জেনেভা ক্যাম্প (টোল মার্কেট) মোহাম্মদপুর অস্থায়ী, রায়েরবাজার মার্কেট, মোহাম্মদপুর, মোহাম্মদপুর টাউন হল মিলনায়তন কাম শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট, মোহাম্মদপুর রিং রোড পাকা মার্কেট, কারওয়ানবাজার ১নং ভবন মার্কেট, কারওয়ানবাজার ২নং ভবন মার্কেট, কারওয়ানবাজার মুরগি শেড, কারওয়ানবাজার মৎস্য আড়ত (অস্থায়ী), কারওয়ানবাজার কর্মকার শেড, কারওয়ানবাজার কাঁচা মার্কেট, কিচেন মার্কেট, কারওয়ানবাজার কাঁচা মালের আড়ত, কারওয়ানবাজার কাঁচা মার্কেটের চতুর্দিক, কলমিলতা কাঁচা মার্কেট।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, ঈদুল ফিতরের পর আমরা ধারাবাহিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো ভেঙে দেব। পুনর্নির্মাণ করার পর এগুলো চালু হবে। এ জন্য মার্কেটের ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় যাবেন না, প্রয়োজনে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।