স্থানীয়দের বাধায় ব্যাহত মাগুরা রেলপথ নির্মাণ

তৎকালীন এমপি কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হন ।। প্রকল্পের ধীরগতিতে অসন্তোষ রেলমন্ত্রীর

তাওহীদুল ইসলাম
০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
স্থানীয়দের বাধায় ব্যাহত মাগুরা রেলপথ নির্মাণ

দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা মাগুরাকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুর জেলার মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের আপত্তিতে এখনো এর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। সংস্থান অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি নেই।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন-পরবর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি অধিগ্রহণ করা যাচ্ছে না স্থানীয়দের বাধার মুখে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে একনেক অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৮ শতাংশ। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত মাগুরা রেলস্টেশনের স্থানের কিছু জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু রেলওয়ে স্লিপার স্টাক করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে রেলস্টেশনের কাজসহ রেল ট্র্যাকের কাজ শুরু করা যায়নি। তৎকালীন সংসদ সদস্যও কয়েক দফায় উদ্যোগ নেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার কারণে কাজ করা যায়নি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আসাদুল হক আমাদের সময়কে জানান, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ যাবতীয় অর্থ ইতোমধ্যে মাগুরার জেলা প্রশাসক দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাধার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এখনো ভূমি দখল পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই নির্মাণকাজ ওই অর্থে শুরু হয়নি।

জানা গেছে, রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। আইএমইডির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পটি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা। এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নকশা অনুসারে নির্মাণকাজের জন্য ফ্রি একসেস দেওয়া প্রয়োজন। সময়মতো বৈদেশিক সরঞ্জাম যেমন- রেল ট্র্যাক, ব্রিজ গার্ডার, এইচ-বিম, সিগন্যালিং ও কমিউনিকেশন সরঞ্জাম, রেললাইন ইলেকট্রিফিকেশন ও ডিজেল পাওয়ার সিস্টেম সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকেও প্রকল্পটির ধীরগতি নিয়ে আলোচনা হয়। মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৪৫.৪১ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ৪৭.৭৫ শতাংশ। প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের মধ্যে প্যাকেজ-১ (ট্র্যাক নির্মাণ)-এর বিপরীতে ৩০৮২ মেট্রিক টন রেল সরবরাহ করা হয়েছে। এমবাংকমেন্ট, পিএসসি স্লিপার ও ব্যালাস্ট সরবরাহ চলমান। দুটি নতুন স্টেশন (কামারখালী ও মাগুরা) নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া স্টিল গার্ডারের ডিজাইনের বিষয়ে বুয়েটের মতামত নিতে দেওয়া হয়েছে চিঠি। বর্ষার আগেই ব্রিজের পাইল ক্যাপ বসানোর কাজ শুরু হবে। বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের কাজের যেন বিঘœ না ঘটে সেভাবে ওয়ার্ক প্ল্যান করার আলোচনা হয়। প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় এ প্রকল্পের ওপর পৃথক সভা করতে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

জানা গেছে, ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে এ অঞ্চলে রেলপথ চালু হয়। এরপর ১৮৭০ সালে গড়াই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ১৮৭১ সালে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাঁশ, বেত ও পাট পরিবহনের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৩২ সালে কালুখালী থেকে ভাটিয়াপাড়া পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হয় এবং একই সময়ে মধুখালী থেকে কামারখালী ঘাট পর্যন্ত আরেকটি শাখা লাইন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ শাখা লাইনটি বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান সরকার সব জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে চায়। সে অনুযায়ী মাগুরা জেলায় রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে।