সবজির দাম কমলেও বেড়েছে চালের দাম
বাজার স্থিতিশীল রাখতে, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৯টি ভোগ্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। অথচ এর কোনো কার্যকর প্রভাব পড়ছে না বাজারে। বেশিরভাগ পণ্য এখনো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি সবজির বাজারে দামের উত্তাপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু ডাল, আলু, ছোলাসহ মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি আগের মতো উচ্চমূল্যেই স্থির আছে। এদিকে পেঁয়াজ ও আলুর দামে নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া যৌক্তিক মূল্যের তালিকার বাইরে থাকা চালের দামও সম্প্রতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্যের তালিকা প্রকাশ করে। এগুলো হচ্ছেÑ মুগডাল, মাষকালাই, ছোলা, মোটা ও উন্নত দানার মসুর ডাল, খেসারি ডাল, পাঙ্গাশ মাছ, কাতলা মাছ, গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ব্রয়লার মুরগি, সোনালি মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনামরিচ, কাঁচামরিচ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, শিম, আলু, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, খেজুর, চিড়া, কলা ও বেসন। উৎপাদক, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ে এগুলোর দাম নির্ণয় করা হয়। এই দাম অনুযায়ী পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করবে বলেও জানায় সংস্থাটি।
কিন্তু গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাজার বলছে, ছোলা আগের মতোই ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত, মসুর ডাল দানাভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, মুগডাল কম-বেশি ১৮০ টাকা, রসুন কম-বেশি ২২০ টাকা, আদা ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, শুকনামরিচ ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা এবং বেসন ১৪০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে, যা যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি। এদিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে দাম কমে পেঁয়াজ ন্যায্যমূল্যের কাছাকাছি এলেও এখন আবার চড়তে শুরু করেছে। ১২০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকায় নেমে আসা পেঁয়াজের দাম এলাকাভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরায় এখন ৭০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দামেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ৩০ টাকায় নেমে আসা আলু এখন ফের বেড়ে ৩৫ টাকায় পৌঁছেছে। কোথাও কোথাও ৪০ টাকা ছাড়িয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তারা পাইকারি পর্যায়ে সেই দর অনুযায়ী পণ্য পাচ্ছেন না। বাড়তি দামে কিনতে হয় বিধায় বেশি দামেই বিক্রি করতে হয় বলে জানান তারা।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি এখন ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ কৃষি বিপণনের হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এ মুরগি যথাক্রমে ১৭৫ টাকা এবং ২৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা। গরুর মাংসের দাম নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি। একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। সর্বশেষ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতি কেজি গরুর মাংসের ন্যায্যমূল্য ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রেতারা এর ধার ধারছেন না। বাজারে বেশিরভাগ দোকানে গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
মাছের বাজার অপরিবর্তিত রয়েছে। পাঙ্গাশ মাছের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য মাছও নাগালের বাইরে।
তবে সবজির বাজারে একটু হলেও দুর্ভোগ কমেছে। রোজার শুরুতে বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এখন তা কম-বেশি ৫০ টাকায় মিলছে। শসার কেজি রোজার শুরুতে ছিল ১০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়। এখন তা কমে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি টমেটো ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শিম, পটোল, বরবটি, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। তবে লাউ পিস হিসেবে এখনো ৫০ টাকার ওপরে রয়েছে। লেবুর দামও কমেনি। প্রতিপিস ১৩ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও। কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমে ৮০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ীর সবজি বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমতে পারে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এদিকে চালের বাজারে ভোক্তার খরচ নতুন করে বেড়েছে। আগে যে মোটা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫১ টাকা ছিল, তা এখন ৫২ থেকে ৫৩ টাকা হয়েছে। মাঝারি মানের চালের কেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মিনিকেটসহ সরু চাল কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। ৬২-৭৮ টাকার চাল এখন ৬৪-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেটে দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি ও খুচরায় প্রভাব পড়েছে। অপরদিকে মিল মালিকরা বলছেন, ধান সংকট ও ধানের বাড়তি দামের প্রভাব চালের দামে পড়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম