ব্যবসায়ীদের দখলে ব্যস্ত রাজপথ
তাঁতীবাজার টু গুলিস্তান
রাজধানীর তাঁতীবাজার থেকে গুলিস্তানের সড়কটি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি। প্রতিদিনই এই সড়কে যাতায়াতকারীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে রাখা ব্যবসায়ীরা সেই কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির সময় ব্যবসায়ীরা কিছুটা সংযত থাকলেও তাদের অনুপস্থিতিতে শুরু হয় সড়ক দখলের মহোৎসব। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর এই সড়ক ঘুরে চোখে পড়েছে এমন চিত্র।
তাঁতীবাজার থেকে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সড়ক দখলমুক্ত রাখতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনাও পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই সড়ক খালি করতে বলেন। তবে তা মানা হয় না। সড়কে ট্রাক, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং করে মালামাল লোড-আনলোড করেন ব্যবসায়ীরা। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তাঁতীবাজারের শুরুতেই সড়কের দুপাশে দেখা মেলে সারি সারি ইস্পাত এবং স্টিলের দোকান। সারা দিন এসব দোকানে বিকিকিনি চলে। এসব দোকানসংশ্লিষ্ট সড়ক দিনের বেশির ভাগ সময়ে থাকে ভ্যান, ঠেলাগাড়ি এবং ছোট-বড় ট্রাকের দখলে। কর্মচারীদের মাল বহনের ফলে ফুটপাতেও লেগে থাকে জট। যত্রতত্র স্টিলের পাত এবং লোহার রড ফেলে রাখায় আঘাতের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাতে হাঁটেন পথচারীরা।
নিয়মিত চলাচলকারী আসাদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রায়ই গুলিস্তান এসে যানজটের কারণে বাস থেকে নেমে যাই। রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত হেঁটে আসি। কিন্তু ফুটপাতে লোহার রড, পাত ফেলে রাখার কারণে হাঁটতেও অসুবিধা হয়। বেশিরভাগ দিনই ফুটপাতে ধাক্কাধাক্কি লেগে থাকে।’
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
তাঁতীবাজার থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলে সড়কের দুপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিস। মূলত এদের সামগ্রীতে বেশি দখল হয়ে থাকে সড়ক। প্লাস্টিকের পাইপ থেকে শুরু করে লোহার পাত, বড় কার্টন, ফোম, প্লাস্টিকের ড্রাম, স্টিলের শিট সবকিছুই রাখা হচ্ছে সড়কে। বেশ কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস ঘুরে দেখা যায়, ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও তাদের সামগ্রী রাখা হচ্ছে সড়কের ওপর।
আহাদ পার্সেল সার্ভিস নামে একটি কুরিয়ার অফিসের দায়িত্বরত এক কর্মচারীর দাবি, ‘সব সময় এগুলো রাখি না। এখন রাখছি এখুনি ভ্যান এসে নিয়ে যাবে।’ সড়কে এসব সামগ্রী রাখা ঠিক কিনা এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সড়কে রাখা ঠিক না। আমরাও চেষ্টা করি না রাখতে।’ সিকদার করপোরেশনের মালিক মানিক সিকদার বলেন, ‘সড়কে মালামাল রাখা ঠিক হয়নি। যেগুলো রাখা হয়েছে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
সড়কের সুরিটোলা পার হয়ে সিদ্দীকবাজারের কাছাকাছি আসতে দেখা যায়, সড়কের দুপাশে থাকা স্যানিটারি ফিটিংসের দোকানের মালামাল রাখা হয়েছে ফুটপাতে। কেউ কেউ আবার দোকানের ক্যাশ টেবিল নিয়ে বসছেন ফুটপাতে। সড়ক এবং ফুটপাতের মধ্যবর্তী স্থানে খুলে বসা হয়েছে টং দোকানও। এই অংশের ফুটপাতে ফলমূল সাজিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় একাধিক হকারকে। এই সড়কে চোখে পড়ে অবৈধ গাড়ি পার্কিং। বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সড়কের ওপরে মোটরসাইকেল এবং ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সড়ক এবং ফুটপাত দখলের এমন কর্মকাণ্ডে কার্যকর মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ট্রাফিক বিভাগ বলছে, দখলদারদের বিরুদ্ধে তাদের নিয়মিত তদারকি চালু আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আসমা সিদ্দিকা মিলি গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘যারা সড়ক দখল করে ব্যবসা করে, সেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালু আছে। এ বিষয়ে তাদের কঠোরভাবে নিষেধ করা হচ্ছে এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি জনগণ যেন স্বস্তিতে চলাচল করতে পারে। তাঁতীবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত ফুটপাতকেও হকারমুক্ত করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম