মার্কেটপাড়ায় ক্রেতার ভিড় হাঁকডাক নেই বঙ্গবাজারে
রাজধানীতে ঈদের কেনাকাটায় প্রতিদিনই ইফতারের পর বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় মার্কেট-শপিংমলে ক্রেতা সমাগম কয়েক গুণ বেড়েছে। ছুটির দিন হওয়ায় গতকালও রাজধানীর গুলিস্তান, টিকাটুলী, নিউমার্কেট এলাকায় ক্রেতার চাপ চোখে পড়ার মতো। এতে দীর্ঘ সময় পর বিক্রি বাড়ায় স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এমন সময়ও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না বলে জানান বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ক্ষত সারিয়ে ব্যবসায় ফিরলেও এখানকার বণিকদের দাবি, এবার তাদের পাইকারি ব্যবসা জমেনি। খুচরায়ও ঢিলেঢালা বাণিজ্য হচ্ছে। ঈদের বাজারেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাণিজ্য না বাড়ায় হতাশ তারা। গতকাল রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে প্রায় প্রতিটি দোকান। তবে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। থান কাপড়, নারীদের পোশাক, অলঙ্কার ও জুতার দোকানগুলোতেই ক্রেতার উপস্থিতি ছিল বেশি। পাশাপাশি বাচ্চাদের কাপড় ও জুতার দোকানেও ব্যস্ততা দেখা গেছে।
নিউ মার্কেটের থ্রি-পিস বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে ক্রেতার ভিড় কয়েক গুণ এবং বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে বলে ধারণা করছি। এ মার্কেটের ফুটপাতে বাচ্চাদের জামা বিক্রেতা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সবাই বাচ্চাদের কেনাকাটা আগেভাগে সেরে ফেলেন। যেভাবে বিক্রি হচ্ছে, তাতে আমি খুশি। নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি
দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীনও জানান, রোজার প্রথম সপ্তাহের তুলনায় মার্কেটে এখন দ্বিগুণেরও বেশি ভিড় বেড়েছে। বিক্রিও বেড়েছে। তবে এখন থান কাপড়, মেয়েদের ডিজাইন ড্রেস, জুতার পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। সামনে অন্যান্য পণ্যের বিক্রিও বাড়বে।
নিউ মার্কেটের মতো চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলোতেও ঈদের কেনাকাটায় হাওয়া লেগেছে। এতে ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফিরেছে। কিন্তু আগুনের ক্ষত এখনো সারিয়ে উঠতে পারেনি নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। কথা হলে নিউ সুপারের মেহেদী ফ্যাশনের কর্ণধার নবাব আলম স্বপন বলেন, আগুন লাগার পর এখন ক্রেতারা আতঙ্কে কম আসছেন। ফুটওভার ব্রিজটা না থাকায়ও ক্রেতা কমেছে। এমন সময় পাঞ্জাবি বিক্রি বাড়ার কথা, অথচ উল্লেখ করার মতো বাড়েনি। একই কথা জানান এখানকার বাচ্চাদের জামা বিক্রেতা মো. সোহেলসহ অন্যান্য বিক্রেতাও।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
একই আক্ষেপ বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদেরও। অগ্নিকা-ের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নতুন করে শুরু করলেও আগের সেই ব্যবসা এখন আর নেই। এক সময় ঈদের বাজারে ক্রেতা সমাগমে মুখরিত থাকলেও বর্তমানে ঢিলেঢালাভাবে ব্যবসা চলছে। এমনটাই জানান এ মার্কেটের আয়েশা এক্সপোর্ট গার্ডেনের আশরাফুল ইসলাম, দেওয়ান ফ্যাশনের মো. রিয়াদ হোসেন, রাফি রাইয়ান ফ্যাশনের মো. শাহিদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী। ঈদের মৌসুমে বেচাবিক্রি সেভাবে না বাড়ায় তারা সবাই হতাশ।
শাহিদ হোসেন বলেন, আগে জমজমাট দোকান ছিল। আর এখন এই ছোট্ট চৌকির ওপর ঋণ করে সামান্য মালামাল তুলেছি। কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। আগে এমন সময় দম ফেলারও সময় পাইনি। আর এখন অলস সময় পার করছি। আশরাফুল ইসলাম বলেন, অতীতে পাঞ্জাবির পাইকারি বিক্রি করে ভালো আয় হতো। এখন সেদিন আর নেই। খুচরা বিক্রি হচ্ছে সামান্য। অথচ সারা বছরে এই সময়টাই ব্যবসার সময়।
তবে গুলিস্তানের অন্যান্য পাইকারি ও খুচরা মার্কেটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে বিক্রি বেড়েছে। করোনার পর দীর্ঘদিন পর এ ঈদে ভালো ব্যবসায় করছেন তারা। ঢাকা ট্রেড সেন্টারের কমফোর্ট জোনের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. দুলাল হোসেন বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবার বিক্রি ভালো। এখনো অর্ডার পাচ্ছি। তবে সবার মাঝে আগুনের আতঙ্ক রয়েছে। সবাই দিন-রাত সজাগ রয়েছি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
দীর্ঘ সময় পর এবার ঈদে মার্কেটগুলোতে বিক্রি বেড়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, করোনাকাল থেকে ঈদের ব্যবসায় ভাটা চলছে। সেখানে এবার অনেকটা ভালো যাচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় রাজধানী সুপার মার্কেটেও গতকাল উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স ও ফরচুন শপিংমল ঘুরে একই চিত্রই দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে জানান রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তবে মেয়েদের ড্রেস ও বাচ্চাদের জামার তুলনায় শাড়ির বিক্রি সেভাবে বাড়েনি বলে জানান এখানকার সেজান আহমেদসহ বেশ কয়েকজন শাড়ি বিক্রেতা।