আকাশপথে থামছেই না স্বর্ণ চোরাকারবার
আকাশপথে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে স্বর্ণ চোরাকারবারিরা। একের পর এক স্বর্ণ চোরাচালান জব্দের পর গত বছর দেশের বিমানবন্দরগুলোতে স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে কমিটি গঠন করে সরকার। কিন্তু দফায় দফায় মিটিংয়েই সীমাবদ্ধ কমিটির কার্যক্রম। ফলে ঠেকানো যাচ্ছে না স্বর্ণ চোরাচালান। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে স্বর্ণের বেশ কয়েকটি চালান ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ শাহজালালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৪ কেজি স্বর্ণের বারসহ নভোএয়ারের গাড়িচালকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন ও এনএসআই। প্রকৃত অর্থে যেগুলো ধরা পড়ছে তা চোরাচালানকৃত স্বর্ণের শতভাগের এক ভাগও নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হলেও এর সুফল মিলছে না। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমানের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় প্রায় প্রতিদিনই স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে যেগুলো ধরা পড়ছে তা চোরাচালানকৃত স্বর্ণের শতভাগের এক ভাগও না। চোরাচালান রোধে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জানা গেছে, গতবছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবৈধভাবে আনা সাড়ে ৩৫ কেজি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। ২০২২ সালে শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রীরা বৈধভাবে ৪৬ লাখ ভরির সমপরিমাণ ৫৪ টন স্বর্ণের বার এনেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৩% বেশি। একই সময়ে শুধু শাহজালাল বিমানবন্দরেই অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করা হয় প্রায় ৫০০ কেজি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া অবৈধ স্বর্ণের হিসাব পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বাংলাদেশকে চোরাচালানের করিডর হিসেবে ব্যবহার করতে না দেওয়াসহ বিমানবন্দরসমূহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদারকরণ, বিমানপথে মাদকদ্রব্য ও স্বর্ণ চোরাচালান রোধের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রেক্ষিতে বিমান মন্ত্রণালয় ও বেবিচক নানা পদক্ষেপও নেয়। এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো এবং নির্দেশনাটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেবিচক কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বেবিচক জানায়, বিমানবন্দরসমূহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নানাবিধ যন্ত্রাদি সরবরাহ ও সংস্থাপন করা হয়। হযরত শাহজালালের জননিরাপত্তা নিশ্চিতে ৫টি পেট্রোল কার ক্রয়, ৪টি একসেস কন্ট্রোল সিস্টেম ও ৪৯৬টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর বেবিচকের সদস্যকে (নিরাপত্তা) আহ্বায়ক করে মাদকদ্রব্য ও স্বর্ণ চোরাচালান রোধে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এর মধ্যে কমিটির ৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন সংস্থার ওপর আরোপিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু স্বর্ণ চোরাচালান থামছে না। কয়েক দিন পরপরই স্বর্ণের চালান ধরা পড়ছে। দেখা যাচ্ছে, আটককৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে বেবিচক ও বিমানকর্মীদের সংযোগ রয়েছে। আগে শর্ষের ভেতর থাকা ভূত তাড়াতে হবে। এ ছাড়া কঠোর আইন প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করলেই চোরাচালান রোধ হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এপিবিএনের এএসপি জিয়া উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সদস্যরা অভিনব পন্থায় স্বর্ণ পাচারের চেষ্টা করছে। তারপরও ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চালান জব্দ করেছি। যাত্রী ছাড়াও গ্রেপ্তারদের তালিকায় সিভিএ, বিমানকর্মীরাও রয়েছে।