জিম্মি জাহাজ-নাবিক উদ্ধারে মধ্যস্থতা শুরু

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যুরো
১৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
জিম্মি জাহাজ-নাবিক উদ্ধারে মধ্যস্থতা শুরু

ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে মধ্যস্থতা শুরু হয়েছে। প্রটেকশন অ্যান্ড ইনডেমনিটি ক্লাব (পিঅ্যান্ডআই) এই মধ্যস্থতা করছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। তবে এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। এ ছাড়া জলদস্যুদের তরফ থেকে এখনো মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি। এদিকে জিম্মি জাহাজের সংবাদ সতর্কতার সঙ্গে প্রকাশের পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটির মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) বলছে, জাহাজে জিম্মি নাবিকদের পাশাপাশি জলদস্যুরা থাকায় খাবার ও পানির চাহিদা বেড়েছে। এ নিয়ে জলদস্যুদের সঙ্গে কথা বলা হবে। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে খাবার ও পানি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা। দিনের বেলা স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন আমাদের সময়কে জানান, জিম্মিরা গত শুক্রবারও পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।

জানা গেছে, দস্যুরা জাহাজের ব্রিজে অবস্থান করছেন, তবে নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজন কেবিনে থাকছেন। ব্রিজে থাকা দস্যুদের বালিশ-কম্বল সরবরাহ করছেন নাবিকরা। জাহাজে ২৫ দিনের খাবার থাকলেও প্রতিদিন ৫০ জনের খাবার রান্না করছেন জাহাজের কুক। ফলে

খাবার সর্বোচ্চ আর দশ দিন চলবে। খাবার শেষ হওয়ার পর দস্যুরা নাবিকদের ভাত ও খাসির মাংস খাওয়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নাবিকরা কোনো ধরনের ছবি বা ভিডিও করছে না।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এমভি আবদুল্লাহকে আগের অবস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটি এখন সোমালিয়া উপকূলের গদবজিরান শহরের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) জানায়, গত বৃহস্পতিবার যেখানে নোঙর ফেলেছিল, সেখান থেকে ৪৫ থেকে ৫০ মাইল উত্তরে সরে গেছে। সেটি এখন সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূল থেকে প্রায় ৪ মাইল দূরে নোঙর করা হয়েছে। বিএমএমওএর সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জলদস্যুদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যাচ্ছে না।

এদিকে, জাহাজ জিম্মির খবর প্রকাশে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশনে কী দেখাচ্ছে, কী হচ্ছে- স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেসব বিষয় দেখার সুযোগ আছে অপহরণকারীদের। সুতরাং আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করলে পরিস্থিতির উত্তরণ সহজ হবে।

উল্লেখ্য, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ের আল-হামরিয়া বন্দরে যাচ্ছিল।

ছিনতাইকৃত এক জাহাজ থেকে ভারতীয় হেলিকপ্টারে গুলি

এদিকে ছিনতাই হওয়া একটি জাহাজ থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। গত শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘ইক্স-এমভি রুয়েন’ নামের মাল্টার পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ওই জাহাজটিকেই আবার ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাইয়ের কাজে এই জাহাজটি ব্যবহার করেছে জলদস্যুরা।