শিল্পে গ্যাসের নতুন সংযোগে ধীরগতি
দেশের ৬টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে সর্ববৃহৎ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তিতাসের আওতাধীন বিশাল এই এলাকায় গড়ে উঠছে একের পর এক নতুন নতুন শিল্প। কিন্তু নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে সরকার। এ কারণে তিতাসে বহু বছর ধরে জমা পড়ে আছে নতুন সংযোগের ৪৮৮টি আবেদন। এসব আবেদন নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, ২০২৬ সালের আগে নতুন কোনো শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গ্যাস ব্যবহারের উপযোগী কিনা তা যাচাই করে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর বাইরে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ নিরুৎসাহিত করা হবে। আর যারা কোনো অবকাঠামো তৈরি না করে গ্যাস সংযোগের আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন বাতিল করা হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তিতাসে অপেক্ষমাণ আবেদনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (অপারেশন) আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব (অপারেশন-২), পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের উপসচিব (অপারেশন-৩)।
কমিটি শ্রেণিবিন্যাসকৃত আবেদন যাচাই-বাছাই করে মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করবে। বাস্তব অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে প্রচলিত বিধিবিধান ও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা বিবেচনা করে প্রতিটি আবেদনের বিষয়ে মতামত বা সুপারিশ করবে। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে নতুন সদস্য যোগ করে নিতে পারবে। এ কমিটি কাজ শুরু করছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, কমিটিকে সবগুলো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। ফলে এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, যেখানে সেখানে শিল্পকারখানা গড়ে তুললে বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগে নিরুৎসাহিত করা হবে। কারণ সরকার দেশে অনেক পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলেছে। সেখানে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পরিকল্পিত লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে শিল্প মালিকরা অনেক সুবিধাও পেয়ে থাকেন।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে গত ৬ মার্চ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যারা অপরিকল্পিত ভবনে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভুল তথ্য দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ নিয়েছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন করে দিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গ্যাস সংযোগের জন্য পরিবেশ, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সব সংস্থার অনুমোদন বা সার্টিফিকেট লাগবে বলেও জানান তিনি।
দেশে চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, ৬টি বিতরণ কোম্পানির আওতায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সব শ্রেণি মিলে গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৫। পেট্রোবাংলার হিসাবে বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য দৈনিক ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দরকার। তবে এ পর্যন্ত গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত জোগান মিলছে। দ্রুত শিল্পায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্যাস সংকট। বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্যাস সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে খুবই ধীরগতি অবলম্বন করছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোল্লা বলেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার ওপর নির্ভর করবে নতুন সংযোগের আবেদন। সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে ২০২৬ সালে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। তখন চাহিদা ও সরবরাহে একটা সমন্বয় থাকবে।
প্রসঙ্গত, এক দশক ধরে দেশে গ্যাসের সংকট চলছে। তাই গ্যাস-সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার নানা সময় নানান শর্ত-বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। গ্যাস সংকটের অজুহাতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরাসরি শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেওয়ারও অনুমতি ছিল না একসময়। শিল্পে গ্যাস সংযোগ পেতে জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির অনুমোদন লেগেছে বিগত কয়েক বছর। এখনো শিল্পে গ্যাস সংযোগ, লোড বৃদ্ধিসহ যাবতীয় অনুমোদন নিতে হলে জ্বালানি সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত বোর্ডের অনুমোদন লাগে।
বিষয়টি নিয়ে কমিটির সদস্য পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, প্রকৃত অর্থে যেখানে সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান করলেই শিল্প সংযোগ দেওয়া যায় না। গ্যাস সংযোগ দেওয়ার আগে গ্যাস বিতরণ কোম্পনিগুলোর গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক, গ্যাসের ডিস্ট্রিক্ট রেগুলেটিং স্টেশন (ডিআরএস) কোথায় অবস্থিত, পাইপলাইনের সক্ষমতা আছে কিনা সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকার পরও একটি পাইপলাইন থেকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হলে বিদ্যমান শিল্পকারখানাগুলো গ্যাসের চাপ কমে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, প্রতিটি শিল্পাঞ্চল পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কত গ্যাস ব্যবহার হতে পারে সেগুলো আগেই নির্ধারণ করে সক্ষমতা অনুযায়ী পাইপলাইন এবং আনুষঙ্গিক কারিগরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম