ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের মুখে তালা দিল বিএসইসি

পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা না করতে চিঠি

আবু আলী
১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের মুখে তালা দিল বিএসইসি

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে বিএসইসির তরফ থেকে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মো. হাসান বাবুর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিঠির কপি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পিরচালক এবং চিফ রেগুলেটরি কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে।

কমিশনের এমন ভূমিকার সমালোচনা করেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ বাজারের গতিবিধি পর্যালোচনা করেই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা যদি আলোচনাই করতে না পারেন, তা হলে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন?

জানা গেছে, ডিএসইর ১০৬১তম পরিচালনা পর্যদের সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী ডিএসই কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে পরিচালনা পর্যদের সভায় বাজার পরিস্থিতি এবং বাজার বিশ্লেষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করে থাকে। এটি স্বার্থের সংঘাতের পর্যায়ে পড়ে বলে মনে করে কমিশন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো কমিটিতে উপস্থাপন না করা পর্যন্ত সারভেল্যান্স, মপস বা মূল্য সংবেদনশীল অপ্রকাশিত কোনো তথ্য পরিচালকরা পাবেন না। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিচালকরা স্বার্থের সংঘাত এড়ানোর জন্য নিজেদের স্বার্থ এবং এক্সচেঞ্জ ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ পরিত্যাগ করবেন। পরিচালনা পর্যদের সদস্য হিসেবে পাওয়া কোনো তথ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করবেন না। একই সঙ্গে আর্থিক বিষয় জড়িত থাকুক বা না থাকুক স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে এমন কোনো বিষয়ে পরিচালকরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা হবে। সেখানে বাজারের উন্নয়নে আলোচনার মাধ্যমে নানামুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে না। তবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে পরিচালনা পর্ষদ।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা হবে, এটা স্বাভাবিক। স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে এমন কোনো বিষয় যাতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না পায়, সে বিষয়ে হয়তো নির্দেশনা দিতে পারে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তো পরিচালনা পর্ষদেই আলোচনা হবে।

তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মো. হাসান বাবু।

ডিএসই (বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রেগুলেশন, ২০১৩ অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য পরিচালনা পর্ষদ নীতি প্রণয়ন এবং সম্পদ সংগ্রহ/মবিলাইজ করবে। পরিচালনা পর্ষদ স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবসা পরিকল্পনা এবং বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করবে। পরিচালনা পর্ষদ কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবিধান এবং বাই-লজ তৈরি করবে। প্রবিধান বা উক্ত আইন-কানুনের অবমাননার জন্য পরিচালনা পর্ষদ শাস্তির সুপারিশ বা তা বাস্তবায়নের পরামর্শ প্রদান করবে। আইন পরিপালন করে পরিচালনা পর্ষদ যে কোনো ব্যক্তির নামে ট্রেক ইস্যু বা ইস্যুকৃত ট্রেক বাতিল বা স্থগিত করতে পারে। এসব ক্ষমতা চর্চা করার জন্য পরিচালনা পর্ষদ কোনোভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অন্যান্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ সব ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। স্টক এক্সচেঞ্জ বা শেয়ারমালিকদের স্বার্থের পরিপন্থি হলেও পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ প্রাধান্য দেবে। পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের দুর্দশা লাঘবের জন্য সচেষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ন্যায়নীতির পন্থা অবলম্বন করবে। স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পরিচালনা পর্ষদ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সাথে পালন করবে। আইন অনুযায়ী পরিচালকরা তাদের ধারণকৃত সিকিউরিটিজ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ বা কমিশনকে প্রদান করবে। আইনগতভাবে বাধ্য না হলে পরিচালকরা দায়িত্ব পালনকালে পাওয়া কোনো তথ্য ফাঁস করবেন না, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে পাওয়া কোনো তথ্য নিজের স্বার্থের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করবেন না।

জানা গেছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তারা নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত। বোর্ডের বেশির ভাগ সদস্য স্বতন্ত্র। তারা নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। কিন্তু কমিশনের এমন নির্দেশনার পর বোর্ড শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা করতে অনীহ। এতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফল শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ওপর পড়ছে। এই কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের যে মূল কাজ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ, সেটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খবর নেবেন।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, শেয়ারবাজারের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে তাদের অবশ্যই আলোচনা করতে হবে। এ ছাড়া কার্যকর শেয়ারবাজার গড়ার ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি আরও বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর স্টক এক্সচেঞ্জ সম্পূর্ণ স্বাধীন।