আমানতের ৪৮ শতাংশের বেশি কোটিপতিদের

দেশের অর্থনীতিতে ডলার, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা সংকট চলছে। এই সংকটের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও দেশে কোটি টাকার আমানত হিসাব বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর- এই তিন মাসে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩২২টি। আর গত এক বছরের দেশে কোটিপতি আমানত হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২টি। পাশাপাশি এসব হিসাবে জমানো টাকার পরিমাণও বেড়েছে।

দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪৮ শতাশের বেশি এখন কোটিপতি হিসাবধারীদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, কোটি টাকার আমানত হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব এমন নয়। কারণ ব্যাংকে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার আমানত হিসাব থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা করোনা মহামারির পর থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুন:

আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে, এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা আছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানতের ব্যাংক হিসাব ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি। ওই প্রান্তিকে এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৭ লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৩২২। একই সময়ে এসব হিসাবের বিপরীতে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৫ হাজার ৯১২ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬০৯টি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানত জমা হয়েছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকাই কোটি টাকার হিসাবধারীদের। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪৮ দশমিক ৩৯ শতাংশই কোটিপতি হিসাবধারীদের।

আরও পড়ুন:

বৃহত্তম হিমশৈল

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৫১৬টি। যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৬৫২টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৮২টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ২ হাজার ২টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ৩৪৫টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯১২টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৪৮০টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭৩৮টি। তা ছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮১২টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল মাত্র ৪৭টি, যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৫১৬টি। করোনা মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫, যা বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজারে উন্নীত হয়েছে।

আরও পড়ুন:

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম