নাগরিকত্ব আইন কার্যকর নিয়ে ভারতে কথার যুদ্ধ
কার্যকর করতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ কেরালা ও তামিলনাড়ু
বহুল সমালোচিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকরের ঘোষণার পর থেকে ভারতে এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো সুর তুলেছেন। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর শরিক দলগুলো আইনটির পক্ষে সাফাই গাইছেন। অন্যদিকে বিরোধী শিবির কড়া নিন্দা জানাচ্ছে; পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও তামিলনাড়–র ক্ষমতাসীনরা বলছেন, তাদের রাজ্যে কিছুতেই এ আইন কার্যকর হতে দেবেন না। খবর এনডিটিভির।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সোমবার বিতর্কিত ও ‘বৈষম্যমূলক’ বলে নিন্দিত আইনটি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর সেদিনই দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে এ আইন কার্যকর করা হচ্ছে। এই আইন ‘মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক’ বলে সমালোচনা রয়েছে। এই আইনের আওতায় আবেদনের সাপেক্ষে) ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের আগে
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অনিবন্ধিত অমুসলিমরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো নথিও চাওয়া হবে না। ২০১৯ সালে লোকসভায় আইনটি পাস হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে এ আইন কার্যকর না করার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দাবি, এমন আইন প্রতিবেশী দেশগুলোর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভুল বার্তা দেবে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা গতকাল তার রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘এ আইন ছুড়ে ফেলে দিন। এ আইন বিজেপির, বাংলা ভাগ করার। বাঙালিদের দেশ থেকে তাড়ানোর এক অভিসন্ধি। আমরা মানি না, মানছি না এই আইন।’
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা আরও বলেন, ‘ওরা বাঙালিদের সহ্য করতে পারে না, বাঙালিদের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য এই আইন এনেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা বিজেপির লুডু খেলার ছক। বিজেপি চাইছে এ নিয়ে বাংলায় অশান্তি তৈরি করতে। আমরা এই বাংলায় সেই সুযোগও দেব না।’
এরই মধ্যে বাংলাদেশ, আফগান্তিান ও পাকিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলিম বাসিন্দারা নাগরিকত্ব পেতে অনলাইনে আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদন করার আগে ভালোমতো ভাবতে রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করেছেন মমতা। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতারাও এই আইন কার্যকরের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেন, ‘কেরালা এই সাম্প্রদায়িক ও বিভেদ সৃষ্টিকারী আইনের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ থাকবে।’
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
তামিলনাড়–র মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন বলেছেন, এই আইন বৈষম্যমূলক, এটি রাজ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে। তিনি বলেছেন, তার রাজ্যে তিনি এ আইন কার্যকর হতে দেবেন না। তার মতে, এই আইন ভারতের সংবিধানের মৌলিক চিন্তার পরিপন্থি। তবে তামিলনাড়–র রাজ্য বিজেপির প্রেসিডেন্ট কে আন্নামালাই বলেছেন, রাজ্যে সিএএ কার্যকরের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আইনগত কোনো ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রী স্টালিনের নেই।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ১০ বছর ধরে দেশ শাসন করার পর মোদি সরকার লোকসভা নির্বাচনের আগে সিএএ কার্যকর করেছে। তারা এমন সময় সিএএ কার্যকর করল, যখন দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা মূল্যস্ফীতির কারণে কাতরাচ্ছে এবং বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এদিকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথ এই আইন কার্যকরের ঘোষণাকে ‘মানবিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এজন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
বিরোধীদের প্রতিবাদকে প্রত্যাখ্যান করে অমিত শাহ গতকাল বলেন, বিরোধীরা ভোট ব্যাংক রাজনীতির জন্য এই আইন কার্যকরের বিরোধিতা করছেন। তিনি বলেছেন, ‘মনে করিয়ে দিই, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আসা মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কিন্তু প্রথমে কংগ্রেস দিয়েছিল। আজ তারা বিরোধিতা করছে। এ কেবলই ভোট ব্যাংক রাজনীতি।’