ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের আর আগের দিন নেই

মাইদুল আলম বাবু
০৮ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৪
শেয়ার :
ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের আর আগের দিন নেই

নানা কথা সয়ে একটা সময় নারীদের স্পোর্টসে আসতে হতো। বাধা সৃষ্টি নতুন কিছু নয়। বাবা-মা বাধ্য হতেন খেলা থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে। খেলতে গেলে পাড়া-প্রতিবেশী তো বটেই, লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে সময় বের করা কঠিন ছিল। নারী দিবসের আগে ক্রিকেটার নিগার সুলতানা, ফুটবলার সাগরিকা ও আর্চার দিয়া সিদ্দিকী জানালেন পরিস্থিতি আগের মতো নেই। খেলার পাশাপাশি সব্যসাচীর মতো সব চালিয়ে নিচ্ছেন তারা। ক্রীড়াঙ্গনের নারীদের নিয়ে ফিচারটি লিখেছেন আমাদের সময়ের স্পোর্টস ইনচার্জ মাইদুল আলম বাবু


নিগার সুলতানা, নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক

নিগার সুলতানা নারী ক্রিকেটে বড় তারকা। সামর্থ্যবান পরিবারে তিনি বড় হয়েছেন। ফলে কষ্ট করতে হয়নি। প্যাড ব্যাট কিনতে সমস্যায় পড়তে হয়নি। নারীদের গোল্ডেন জেনারেশন তিনি। নারী দিবসের আগে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘নারী ক্রিকেটারদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। আগের মতো নেই। সুন্দর পরিবেশে ক্রিকেট খেলে তারা। আগের মতো কষ্ট করতে হয় না। আর আমার পরিবার তো আর্থিকভাবে সচ্ছলই ছিল। আমার কোনো কষ্ট করতে হয়নি। নিজের ব্যাট-প্যাড বা জুতো কিনতে কখনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। আমরা যখন ক্রিকেট শুরু করেছিলাম তখন গল্প এমন ছিল না। বর্তমানে আমাদের পরিস্থিতি আগের মতো নেই। সবকিছু ভালোই চলছে। আশা করি সামনে নারী ক্রিকেটারদের সব কিছুতেই উন্নতি হবে।’

নিগার মনে করেন এখন ক্রিকেটে সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। নতুন যারা ক্রিকেট খেলতে আসবেন তাদের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। আগ্রহটাই বড় এখন। আর নতুন যারা আসছেন তারাও ভালো করছেন। 

নিগার মনে করেন মেয়েদের ধারাবাহিক পারফর্ম করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সামনে আরও মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে আসবেন।  

নিগার সুলতানা

সাগরিকা, ফুটবলার, অনূর্ধ্ব-১৯

সাগরিকা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার ফুটবলে আসার পেছনে বেশ কঠিন গল্প লুকিয়ে রয়েছে। তিনি যখন ঢাকায় খেলতে আসেন তখন সবাই ভেবেছে, বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ফুটবল খেলি বলে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। অনেক দিন কথা বলতেন না। আমি কতবার বাবাকে ফোন করেছি, ধরতেন না। গ্রামের লোকও অনেক বাজে কথা বলেছে। নারী ফুটবল লীগে খেলার সময় যখন ঢাকা আসি এলাকার অনেকে মায়ের কাছে এসে বলতেন, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই রাগ করবে না তো। মা বলতেন, কী কথা? ওনারা বলতেন, শুনলাম তোমার মেয়ে নাকি এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে গেছে। তখন নারী লীগ চলছিল। ইউটিউবে খেলা দেখাত। মা ওই ম্যাচের ভিডিও দেখিয়ে বলত, আমার মেয়ে ছেলে নিয়ে পালিয়েছে নাকি অন্যকিছু করছে টাচ ফোনে তোমরা দেখে নিও। এই চ্যানেলে খেলা দেখায়। সবাই এখন খুশি।’

সাগরিকার বাংলাদেশ দল ভারতের সঙ্গে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়। সাগরিকা এখন সামনে তাকিয়ে রয়েছেন। আরও ভালো কিছু করতে চান।  

দিয়া সিদ্দিকী, আর্চার

আমরা নারীরা স্পোর্টসে আসলে নানা সমস্যায় পড়ি। তবে আর্চারি ফেডারেশনে এমন কিছু হয়নি। এখন আমরা ভালো করে অনুশীলন করি। আর খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের খেলার মাঝেই ডিফেন্সে (বাহিনী) যেতে হয়। আমাদের একেকজনের একেক গোল থাকে। খেলোয়াড় জীবনের পর আমরা আসলে কী করব। এখানে আমরা বড় পদবি পাই না। সৈনিক ছাড়া উচ্চ র‌্যাংক দেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার অনিশ্চিত। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বেশ কঠিন স্পোর্টস। আমার পারিবারিক সমস্যায় পড়তে হয়নি। আর্থিক সমস্যা রয়েছেই। বাজারঘাটের যে পরিস্থিতি সে ক্ষেত্রে আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া মানে চাকরি বা সম্মানের কিছু করতে চাই। আমার মনে হয় মেয়েরা যদি খেলার পর কোনো চাকরি ও বড় সম্মানের পদে আয় করতে পারে তো সেটা বড় ব্যাপার হবে। নারী দিবসে আমি আশা করি মেয়েরা সমস্যার বিপক্ষে লড়বে। আর সমস্যা ঠাÐা মাথায় হ্যান্ডেল করতে হবে। নারী দিবসে সব নারী অ্যাথলেটকে আমার শুভকামনা ও ভালোবাসা।