নারীর ক্ষমতায়ন একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে
নারীসমাজকে অনগ্রসর রেখে বিশ্বের কোনো দেশই উন্নত হতে পারেনি। তাই তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সংবিধানে নারী পুরুষের সমতার কথা বলেছেন; পিছিয়ে থাকা নারীদের এগিয়ে আসার লক্ষ্যে সংসদে নারীদের সংরক্ষিত কোটা পদ্ধতি চালু করেন। এরপর থেকে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বাড়তে থাকে। তবে এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদে ও মন্ত্রিসভায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারীর ক্ষমতায়ন একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে অর্থাৎ দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী নারীদের পরিসংখ্যান বলছে, নারীর আসন সংরক্ষিত থাকলেও সরাসরি ভোটে বিজয়ী হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা নারীর সংখ্যা বাড়েনি।
দ্বাদশ সংসদে ৭০ জন নারী সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মাত্র ২০ জন, অবশিষ্ট ৫০ জন সংরক্ষিত আসনের। এ ছাড়া একাদশ সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ছিল ৭২ জনের। তাদের মধ্যে সরাসরি ভোটে নির্বাচত ২৩ জন, সংরক্ষিত আসনে ৪৯ জন। দশম সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ছিল ৭৩ জনের। তাদের মধ্যে সরাসরি ভোটে নির্বাচত ২৩ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
একই অবস্থা মন্ত্রিসভায়ও। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় নারী প্রতিনিধি ছিলেন মাত্র ৫ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-উত্তর মন্ত্রিসভায়ও নারী প্রতিনিধি ছিলেন ৫ জন। তখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ছাড়া দুজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ছাড়াও ৬ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। তারা হলেন- মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম রুমানা আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
তবে দ্বশম ও একাদশ সংসদে চারটি শীর্ষ পদেই ছিলেন নারী প্রতিনিধি। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরী। এ ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বেগম রওশন এরশাদ। বর্তমান দ্বাদশ সংসদেও স্পিকার, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা নারী। তবে দীর্ঘদিন পর বিরোধীদলীয় নেতার পদটি নারীবঞ্চিত।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার পদে বর্তমানে ১ জন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদে ২ জন, ভারপ্রাপ্ত কমিশনার পদে ৭ জন, অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত কমিশনার ৬২ জন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ১২৮ জন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৪০ জন। বর্তমানে প্রশাসনে ৩৪০ জন নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে যা মোট প্রতিনিধিত্বের ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন