জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে ভাবছে বিএনপি

নজরুল ইসলাম
০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে ভাবছে বিএনপি


গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর সম্মেলন (কাউন্সিল) করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করার কথা বিএনপির। তবে প্রায় আট বছর ধরে দলটির কাউন্সিল হচ্ছে না। এবার জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে দলটি। গত সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে মোটামুটি সিদ্ধান্ত হতে পারে। এমনকি কাউন্সিলের তারিখও নির্ধারণ করা হতে পারে।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত কমিটি করার কথা বলা আছে। বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। এই কমিটি নির্বাচিত হবে তিন বছরের জন্য। সে হিসাবে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে দলটির আরও দুটি কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটিও হয়নি। যদিও দলটির নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে কাউন্সিল করা যায়নি।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঘুরে দাঁড়াতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানা গেছে, বৈঠকে আলোচনার শেষ পর্যায়ে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাতীয় কাউন্সিলের প্রসঙ্গটি সামনে আনেন। তিনি বলেন, যেহেতু অনেক দিন বিএনপির কাউন্সিল হয়নি, এখন কাউন্সিল করা যেতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।

বৈঠক সূত্র জানায়, কাউন্সিল নিয়ে এমন প্রস্তাবনার পর স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে উপস্থিত নেই। আগামী বৈঠকে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। ফলে কাউন্সিলের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ ছাড়া বৈঠকে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগের বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনার পর যে কোনো সময় এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। সূত্রমতে, রমজান শুরুর আগে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি হতে পারে।

বিএনপির কাউন্সিল প্রসঙ্গে দলটির দুই নীতিনির্ধারক বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হওয়া প্রসঙ্গে দলের দুজন নীতিনির্ধারক বলেন, পরিস্থিতি যাই থাকুক কাউন্সিল করতে হবে। জাতীয় কাউন্সিল একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। চার হাজারের বেশি কাউন্সিলার রয়েছে। এরপর ডেলিগেট। এমন একটা কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করতে সময়ের দরকার। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনেরও একটি বিষয় রয়েছে। গণতান্ত্রিক দল হিসাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করতে হবে। হয়তো শিগগিরই একটা তারিখ নির্ধারণ করে প্রস্তুতি শুরু করা হবে।

সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কিছু দিন পর স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা ছিল। মৃত্যু, পদত্যাগ, বহিষ্কারের কারণেও কিছু পদ ফাঁকা হয়েছে। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির শুরুতেই দুটি পদ ফাঁকা ছিল। এরপর তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মারা যান। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করা হয়নি। অসুস্থ থাকায় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকসহ কোনো রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন না।

এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই হিসাবে এখন সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে অন্তত ৯টি পদ ফাঁকা। এ ছাড়া ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির মধ্যেও বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যেও কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন। কয়েকজনকে বহিষ্কার আর কয়েকজন স্বেচ্ছায়ও পদত্যাগ করেছেন। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ১৩০টির মতো পদ এখন শূন্য। তা ছাড়া বয়সের কারণেও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মকা-ে নিষ্ক্রিয়।

দলটির নেতারা জানান, সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৃণমূলের কমিটি পুনর্গঠনের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি জেলার আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় থমকে যায় পুনর্গঠন, সাংগঠনিক কর্মকা- স্থগিত রাখা হয়। পরে আবারও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সেসব কমিটিরও মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।