অভিযান-আতঙ্কে রেস্তোরাঁ মালিকরা
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন : হয়রানি বন্ধে টাস্কফোর্স গঠনের দাবি ।। ব্যানার ঝুলিয়ে পালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ভবনের নকশা ও অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার বিরুদ্ধে ভবনগুলোতে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থা। অভিযানে সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে অনেক রেস্তোরাঁ ও ভবন।
চলমান এ অভিযান নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের মাঝে। অনেক এলাকায় রেস্তোরাঁর মালিকরা ব্যানার টানিয়ে বন্ধ রেখেছেন তাদের প্রতিষ্ঠান। তাদের অভিযোগ, অভিযানের নামে হয়রানি করা হচ্ছে।
এ নিয়ে গতকাল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছে। এতে রেস্তোরাঁ খাত ধ্বংসের পাঁয়তারা হচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করার পাশাপাশি অভিযান পরিচালনায় টাস্কফোর্স গঠনের দাবিও তুলে ধরা হয়। মালিক সমিতির ভাষ্য, গত দুদিনে রাজধানীতে ৪০টিরও বেশি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযানে সাময়িক সমস্যা হলেও নিরাপত্তা বিবেচনায় এটিকে ইতিবাচকভাবে নিতে হবে।
রাজধানীর একাধিক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংস্থাগুলোর এমন ঝটিকা অভিযানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে। ফলে ব্যবসা নিয়ে শঙ্কিত তারা। গতকাল দুপুরে পুরানা পল্টনে বিক্ষোভ করেন রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মচারীরা।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চানখাঁরপুল এলাকার একটি রেস্তোরাঁর মালিক মো. মাসুম বলেন, যেভাবে অভিযান হচ্ছে কখন আমার সিরিয়াল আসে তা নিয়ে টেনশনে আছি। আমরা তো সব কাগজপত্র নিয়েই ব্যবসা করছি। তবু কেন হয়রানির শিকার হতে হবে?
গতকাল সকালে রাজউকের অভিযানে সিলগালা করা হয় বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁ। বিকালে মুঠোফোনে কথা হয় রেস্তারাঁটির মালিক কামরুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রচলিত নিয়মের সব ছাড়পত্রই তিনি নিয়েছেন। তবে রাজউকের অনুমোদনের বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি বলেন, এত বছর ধরে ব্যবসা করছি। সব দপ্তরের লাইসেন্সই রয়েছে আমাদের। এখন শুনছি রাজউকের অনুমোদন লাগবে। এটা আগে জানলে আগেই নিয়ে রাখতাম। এর আগে কখনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নোটিশও করেনি, জানতেও আসেনি। তারা সিলগালা না করে সময় বেঁধে দিতে পারত। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের সম্মান জড়িত থাকে। এভাবে হয়রানি করা ঠিক না। এতে আমাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ আমাদের সময়কে বলেন, ‘অভিযানের কারণে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে এটা সত্য। অনেকের রুটিরুজি এর সঙ্গে জড়িত। তবে নিরাপত্তা বিবেচনায় অভিযানকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। যেসব রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়েছে, সেগুলো সাময়িক। তাদের রেস্তোরাঁকে ঝুঁকিমুক্ত করলে আবার চালু হবে। এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। তবে অভিযান আরও বেশি পরিকল্পিত হওয়া দরকার ছিল।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন
চলমান অভিযানের বিষয়ে গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। সম্মেলনে সংগঠনটির সদস্যরা অভিযানের নামে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। রেস্তোরাঁ খাত ধ্বংসের পাঁয়তারা হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। দাবি তোলা হয়, অভিযান পরিচালনায় যেন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকা-ের দায় কেউ এড়াতে পারেন না। পুরো ভবনটাই ছিল অনিয়মে ভরা, ভবনটির অনুমোদন দিয়েছে রাজউক, রেস্তোরাঁ সেক্টরটি তদারকি করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, সংযুক্ত আছে জেলা প্রশাসনসহ অনেক অধিদপ্তর ও সংস্থা।
একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রেস্তোরাঁশিল্পের বিরুদ্ধে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে এবং কর্তৃপক্ষের ‘ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অভিযান’ চালানো হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে হলে একাধিক সংস্থা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সব রেস্তোরাঁয় কিছু না কিছু সনদ থাকে। কারও কাছে কয়েকটি সনদ থাকলে সেই রেস্তোরাঁ অবৈধভাবে ব্যবসা করছে, তা বলার সুযোগ থাকে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁ ব্যবসা সম্ভবও নয়। এর পরও যদি কেউ আইনের ব্যত্যয় করেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত তো হবেনই, বেকার হবেন আরও অনেকে। ভবনের মালিকেরা হবেন ভাড়াবঞ্চিত।
ইমরান হাসান আরও বলেন, অনেক ছোট উদ্যোক্তা রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ছোট উদ্যোক্তা থাকবে না; বরং পুঁজিপতিদের হাতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলে যাবে। বেকারি খাত ইতোমধ্যে তাদের হাতে চলে গেছে। এখন রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে বিতর্কিত করে, এই খাতের নিয়ন্ত্রণও তারা নিতে চান। এটি শুভ লক্ষণ নয়।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
এ সময় অগ্নিকা-ে ৪৬ জনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে আগামী বৃহস্পতিবার প্রতিটি রেস্তোরাঁয় কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।