যুব মহিলা লীগে হযবরল অবস্থা
কেন্দ্রের সঙ্গে মহানগরের টানাপোড়েনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগে। শুধু তাই নয়, সাবেক দুই শীর্ষ নেত্রীর সুতোর টানে হযবরল অবস্থায় আছে সংগঠনটি। অন্যদিকে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে। তবে বর্তমান নেতৃবৃন্দের ভাষ্য তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান, কিন্তু পারছেন না। যদি স্বাধীনভাবে কাজ করা সম্ভব না হয়, তাহলে অচিরেই তারা রিজাইন করবেন।
এদিকে গতকাল বিকালেও ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও সংগঠনটির বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফারজানা ইসলাম বিপ্লবী ও সাধারণ সম্পাদক নিলুফার রহমানের নেতৃত্বে একদল সদস্য সেখানে যান। অফিসের চাবি না পাওয়ায় ক্ষোভে বাইরে বসেই কর্মিসভা শুরু করেন তারা। খবর পেয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ আসেন এবং বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে জানান। পরে তার নির্দেশনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের পার্টি অফিসের দোতলার মিলনায়তনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তারা কর্মিসভা করেন।
এ বিষয়ে ফারজানা ইসলাম বিপ্লবী আমাদের সময়কে বলেন, ‘আগামী দিনে দলের নির্ধারিত কর্মসূচি পালনের বিষয়ে কথা বলেছি।’ কমিটি গঠনের বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এক বছর ধরেই কমিটি গঠনের বিষয়ে কথা বলছি; কিন্তু কেন্দ্র থেকে কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। তাই আমরা ভাবছি (আওয়ামী লীগের) দপ্তরে কমিটি জমা দেব।’ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মহানগরের সম্পর্কেও টানাপোড়েন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নেই, তবে উনাদের পক্ষ থেকে আছে কিনা জানি না।’ অন্যদিকে নিলুফার রহমানকে ফোন করলে তিনি মহানগরের কর্মিসভায় ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন।
এসব বিষয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজীকে অবহিত করলে তিনি আমাদের সময়কে জানান, ওখানে প্রোগ্রামের ব্যাপারে তাকে বা সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিকে অবহিত করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদের আগেই মহানগরের কমিটি দেওয়ার উদ্দেশ্যে সিভি চেয়েছি। আশা করি কমিটি হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
জানা গেছে, গত সপ্তাহের শেষ দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ চার নেতা আলেয়া সারোয়ার ডেইজী ও শারমিন সুলতানা লিলিকে না জানিয়ে কমিটি জমা দিতে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে। এ সময় দলের দপ্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর ছাড়া এই চিঠি গ্রহণ করা হবে না।
গত রবিবার বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের দপ্তর সম্পাদক সাবরিনা ইতি স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়Ñ বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রস্তাবিত কমিটি ও পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কেন্দ্রের অনুমতি/অনুমোদন ব্যতীত বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের জেলা/মহানগরের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা/থানার কমিটি গঠন বা বিলুপ্ত করা যাবে না। এই নির্দেশনা অমান্য করে কমিটি গঠন বা বিলুপ্ত করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে জেলা ইউনিট এবং মহানগর ইউনিটকে স্ব-স্ব ইউনিটের সাংগঠনিক প্রতিবেদন আগামী পনের দিনের মধ্যে কেন্দ্রে প্রদান করতে হবে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সাততলায় যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এ সময় যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, আমরা যুব মহিলা লীগের দায়িত্ব পেয়েছি। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে সংগঠনের জন্য কিছু করতে পারছি না। সংগঠনের প্রতিটি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে সম্প্রতি সংগঠনটির সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুজন ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) যুব মহিলা লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান। এরপর থেকে ঢাকা মহানগর যুব মহিলা লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রীরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মানতে চাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে শারমিন সুলতানা লিলি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে এখনই রিজাইন দেব। আলেয়া সারোয়ার ডেইজী বলেন, যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে যুব মহিলা লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি। কাজ করার সুযোগ না পেলে আমরা সাক্ষাৎ করে নেত্রীর কাছে মাফ চেয়ে সংগঠন থেকে বিদায় নেব। আর কাজ করার স্বাধীনতা দিলে সারাদেশে যুব মহিলা লীগের উদ্দীপনা দেখিয়ে দেব।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
ইতিপূর্বে যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকেই সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিভিন্ন দিবসে ও সংগঠনের একাধিক কর্মসূচিতে এই দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়েছে। কখনো কখনো ডেইজীকে বাদ দিয়ে একক স্বাক্ষরে বিজ্ঞপ্তিও দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই দলীয় ফোরামে প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। বর্তমান কার্যক্রমের বিষয়ে এ দুই নেত্রী এক হওয়ার কারণ সাবেক দুই নেত্রীর বলয় থেকে সংগঠনকে রক্ষা করে নিজস্ব বলয় তৈরি করা।