‘সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
‘সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমবে’

বিদ্যুৎকেন্দ্রে ও ক্যাপটিভ শিল্পে (শিল্প কারখানায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন) গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং পাইকারি ও খুচরায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর এবার বাড়ল এলপিজির দামও। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি চলতি মার্চ মাসের জন্য ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজির দাম ১২ কেজিতে আট টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪৮২ টাকা করেছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল এক হাজার ৪৭৪ টাকা। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর হয়েছে। এদিকে বিশ^বাজারে এলপিজির মূল্যবৃদ্ধি না হওয়া এবং ডলারের দাম কমার পরও এলপিজির মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছে বিইআরসি। আমদানিকারক কোম্পানির চালান মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দাম হিসাব করে বিইআরসি।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন। প্রতিমাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে। তবে বিইআরসির ঘোষিত দাম সবসময় সব জায়গায় কার্যকর নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিইআরসি থেকে বরাবরই বলা হয়, কেউ অভিযোগ দিলে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন মূলত আমদানিনির্ভর। প্রতিমাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী বেসরকারিতে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে। সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির দাম ৫৯১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৯০ করা হয়। আর গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতিলিটার প্রায় ৬৮ টাকা ৫ পয়সা, যা এতদিন ছিল ৬৭ টাকা ৬৮ পয়সা। বাজারে সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়।

সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমবে : দেশে গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম চলতি সপ্তাহেই কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিশ^বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে ‘ডায়নামিক প্রাইজিং’র ফর্মুলা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জ্বালানি বিভাগ। এর দুদিন পরই দাম কমার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয় হবে। সামনের বার যদি বিশ^বাজারে জ্বালানির দাম কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া গেলে মূল্য আরও কমবে। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ডিজেল, যেটা বেশি ব্যবহার হয়। পাবলিক যাতে সুবিধা ভোগ করতে পারে, সেটাই চাচ্ছি। জ্বালানি তেলের দাম কমলে গণপরিবহনেও ভাড়া কমবে।

প্রসঙ্গত, বিশে^র অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সমন্বয় করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি বা কমার বিষয়টি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের উদ্যোগের ওপর নির্ভরশীল। তেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে যখন নানা প্রশ্ন উঠেছে সেই বিতর্ক এড়াতে সরকার এবার ডায়নামিক প্রাইস নির্ধারণে ‘নতুন ফর্মুলার’ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশেও প্রতিমাসে একবার দাম সমন্বয় করা হবে। এতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি দূর হবে।