লামিশার শেষ আকুতি ‘বাবা আমাকে বাঁচাও’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
লামিশার শেষ আকুতি ‘বাবা আমাকে বাঁচাও’

‘বাবা আমি আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছি, তাড়াতাড়ি আমাকে উদ্ধার করো’- এই ছিল বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী লামিশা ইসলামের শেষ কথা। পরে একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পায়নি পরিবার। মা হারা লামিশাকে উদ্ধারে তার বাবা পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম নানা চেষ্টা করেও মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি। শুক্রবার ভোরে লামিশার নিথর দেহ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

বুয়েট শিক্ষার্থী লামিশা ইসলামের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে চলছে শোকের মাতম। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে লামিশার লাশ শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীর বাড়িতে এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লামিশার স্বজনরা লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। লাশ দেখতে স্থানীয় প্রতিবেশীরাও ভিড় জমান। পরে জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

লামিশার বাবা নাসিরুল ইসলাম শোকে পাথর হয়ে গেছেন। ২০১৮ সালে মা হারিয়েছেন লামিশা। মায়ের ইচ্ছাতে লামিশা বুয়েটে ভর্তি হন। কিন্তু মায়ের সে আশা আর পূরণ হলো না। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় লামিশা ইসলাম।

লামিশার চাচা রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মগবাজারের পুলিশ কোয়ার্টারের বাসা থেকে বান্ধবীকে নিয়ে খাবার খেতে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে যায় লামিশা। রাতে আগুন লাগার পর লামিশা তার বাবার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে, সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছে। তাড়াতাড়ি তাকে উদ্ধারের কথা জানায়। পরে পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেও তাকে ফোনে পায়নি। ভবনের ভেতরে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে বান্ধবীসহ সে মারা যায়। তিনি আরও বলেন, তার ভাতিজি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তাদের পরিবারের অনেক আশা ছিল লামিশাকে নিয়ে। ২০১৮ সালে মা হারা লামিশা সংসারের সব কিছু দেখাশোনা করত। একটি দুর্ঘটনায় পরিবারের সব শেষ হয়ে গেল।

রাজধানীর হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গ-ি পেরিয়ে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পান গেল বছর। তিনি ছিলেন বুয়েটের ২২তম ব্যাচের মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্রী। স্কুল জীবনেও ছিলেন মেধাবী। তার বাবা নাসিরুল ইসলাম শামীম পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদে কর্মরত রয়েছেন। নাসিরুল ইসলাম শামীমের দুই কন্যার মধ্যে লামিশা ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। ২০১৮ সালে অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যায় তার মা। এরপর ছোট বোন আর বাবাকে আগলে রাখতেন বড় বোন লামিশা ইসলাম। দুই কন্যা সন্তানের কথা চিন্তা করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবা আর বিয়েও করেননি।