বিদ্যুৎ বিল না দিয়ে বাসা ছেড়েছেন ৬ চিকিৎসক
সরকারি বাসায় বাস করেও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেননি ছয় চিকিৎসক। তারা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক। মেডিক্যাল কলেজের আবাসিক ভবনের কোয়ার্টারে থাকতেন তারা। তবে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর আগে আবাসিক ভবনটি মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু এক লাখ ১৩ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় নতুন করে আর সংযোগ দিচ্ছে না বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় ঘোষণা হলেও বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন ছিল না। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের একটি প্রফেসর কোয়ার্টার (আবাসিক ভবন) রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (রামেবি) অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বরাদ্দের পর ভবনটির সংস্কারকাজও করেছে রামেবি। ভবনটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রামেবির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আবাসিক ভবনটিতে যে বিদ্যুৎ লোড দেওয়া আছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না। তা ছাড়া ভবনের ওয়্যারিংয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে ভবনটিতে থ্রি-ফেজ মিটারের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোর কাছে আবেদন করে রামেবি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নেসকো সাফ জানিয়ে দেয়, বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত থ্রি-ফেজ মিটার সংযোগ দেওয়া হবে না। নেসকোর এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে রামেবি। এর পর বকেয়া বিল পরিশোধে ২০২১ সালের শেষ দিকে রাজশাহী
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দেয় তারা। তবে এ পর্যন্ত বিল পরিশোধ করেনি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
রামেবির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করেই সরকারি বাসা ছেড়েছেন প্রফেসরস কোয়ার্টারের (২ নম্বর ভবন) অন্তত ছয় চিকিৎসক। তাদের বাকির পরিমাণ এক লাখ ১৩ হাজার ৫৭৫ টাকা। বিদ্যুৎ বিল ফাঁকির তালিকায় আছেন খোদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীও। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালে জুন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ হাজার ৮৯৩ টাকা বিদুৎ বিল পরিশোধ না করেই তিনি বাসা ছেড়েছেন। এ ছাড়া কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম মনোয়ারুল ইসলামের নামে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া ২৮ হাজার ২৫১ টাকা, অধ্যাপক কমরউদ্দিন আহমেদের বাকি ২৭ হাজার ৪৭৬ টাকা, ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি বাসার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১৩ হাজার ৯৬ টাকা, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডা. হারুন আর রশীদের নামে বকেয়া পড়ে আছে ১৩ হাজার ৪০৪ টাকা এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের ডা. আসিফ হাসনাইনের বাসার বিদ্যুৎ বিল বাকি রয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৫ টাকা।
বিদ্যুৎ বিল বাকি প্রসঙ্গে ডা. হারুন আর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমার কোনো বিল বাকি নেই। বাসা ছাড়ার একটা নিয়ম আছে। আমরা বাসা ছাড়ার আগে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। কাজেই আমার কোনো বিল বাকি থাকার কথা নয়’।
বকেয়া বিল প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘আমরা একসময় ওই বাসাগুলোতে থাকতাম। এ কারণে বিদ্যুতের মিটার আমাদের নামেই ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে ভবনটি রামেবি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু পরেও সম্ভবত মিটারগুলো আমাদের নামে থেকেই গেছে। এ কারণে বিলও আমাদের নামে এসেছে। এটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তবে আমাদের কাছে কোনো বিল পেলে তা অবশ্যই পরিশোধ করা হবে’।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডা. জাকির হোসেন খোন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে মেডিক্যাল কলেজের একটি ভবন বিনা বরাদ্দেই দখল করে রেখেছেন কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারী। সরকারি খাতে ভাড়া না দিয়েই বছরের পর বছর তারা এই ভবনে বাস করছেন। এর মধ্যে ৪ নম্বর আবাসিক ভবনটি দখলে রেখেছেন কলেজের হিসাবরক্ষক হাফিজুর রহমান, ক্যাশিয়ার মইনউদ্দিন, টেকনোলজিস্ট মহসিন, দপ্তরি আবদুর রহিম ও অফিস সহায়ক সাইফুল ইসলাম। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনটির পুরোটাই অবাসিক হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা। এমনকি সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া আছে। ভবনটির প্রতিটি অংশেই কেউ না কেউ দখল করে রেখেছেন। প্রতি তলাতে দুই থেকে তিনটি করে পরিবার থাকছে। দ্বিতীয় তলায় পাওয়া যায় কলেজটির হিসাবরক্ষক হাফিজুর রহমানকে। তিনি জানান, এখানে ডাক্তার তারিক হাসান সুইট, ডা. জীবন, মহসিন ও মঈন উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন থাকছেন। এই ভবন বরাদ্দ নিয়েছেন কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিঠি করে নিয়েছি। তবে ভাড়া দিতে হয় না। শুধু বিদ্যুৎ বিল আমাদের দিতে হয়।’ এ সময় কর্তৃপক্ষের চিঠি দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। ডা. তারিক হাসান সুইট বলেন, ‘আমার এখন ঢাকায় পোস্টিং। এ কারণে আমি আর থাকি না। এটি পরিত্যক্ত ভবন, কেউ থাকেন না’।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ৪ নম্বর ভবন পরিত্যক্ত। তবে দেখাশোনার জন্য ২-১ জন সিকিউরিটি গার্ড থাকতে পারে। কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম