আমেরিকার বাজারে জোর নজর বিকল্প উৎসে

আব্দুল্লাহ কাফি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
আমেরিকার বাজারে জোর নজর বিকল্প উৎসে



বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ জেঁকে বসেছে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর। তৈরি পোশাকের বড় বাজার আমেরিকা দিন দিন বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশে^র অন্যান্য দেশ থেকেও তারা পণ্য নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি বাড়ায় ক্রেতাদের কাছে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া এর মূল কারণ। এমন পরিস্থিতিতে এই বাজার যাতে হাত ছাড়া না হয়, সে লক্ষ্যে জোর দিয়ে কাজ করছে সরকার ও উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি আমেরিকার বিকল্প বাজারগুলোর উৎসের খোঁজে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। 

শিল্প-উদ্যোক্তারা বলছেন, আমেরিকার বিকল্প বাজার এখনো তৈরি হয়নি। আমেরিকায় প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের বাজার। এত বড় বাজার অন্য কোথাও তৈরি করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া আমেরিকায় উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়, যা অন্য দেশগুলোর পক্ষে এত উচ্চমূল্য দিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমেরিকার বাজার কোনোভাবেই হারাতে চায় না বাংলাদেশ। এই বাজার আরও প্রসারিত করতে ক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। 

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের মূল উৎস তৈরি পোশাক। এই খাত থেকে বিজিএমইএর হিসাবে গেল বছর এসেছে ৪৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে আমেরিকা থেকে ৭.২৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও এই আয় আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। তবে আমেরিকায় ২৫ শতাংশ রপ্তানি কমে গেলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেনি, বরং বেড়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের ‘অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলস’ (অটেক্সা) প্রকাশিত হিসাব থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক গেছে ৯.৭২ বিলিয়ন ডলার। যা এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। তবে কোভিড-১৯ পরবর্তী ২০২১ সালে রপ্তানি কম ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে ৯.৭২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হলেও ২০২৩ সালে সেটা না বেড়ে উল্টো কমেছে। ২০২৩ সালে রপ্তানি হয়েছে ৭.২৯ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং এক বছরে রপ্তানি কমেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার বা ২৫ শতাংশ।

মার্কিন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে মূল ভূমিকা রেখেছে

ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে বিকল্প বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি।

বাংলাদেশ থেকে এক দশক আগেও ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে অন্য দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি ছিল মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র ১৪.৭৯ শতাংশ। পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালে সেটা বেড়ে হয় ১৬.৬৭ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে সেটা হয় মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮.৭২ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, তৈরি পোশাক শিল্প-উদ্যোক্তারা এখন জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও চীনের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছেন। এর ফলও মিলছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডলারের অঙ্কে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে জাপান থেকে। বিজিএমইএর হিসাবে ২০০৯ সালে জাপান থেকে আয় ছিল একশ এগারো মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালে সেটা বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে অর্থাৎ ১.৬৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, তুরস্ক, সৌদি আরব, রাশিয়ার এমনকি ভারতের মতো দেশগুলোতেও রপ্তানি বাড়ছে। 

বাংলাদেশের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিকল্প বাজারে গুরুত্ব পাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সৌদি আরবসহ বেশ কটি দেশ।

কিন্তু এসব দেশে বিশেষ নজর ও রপ্তানি বাড়লেও আমেরিকার ‘বিকল্প বাজার’ হতে পারবে না বলেও জানান উদ্যোক্তারা। কারণ একক দেশ হিসেবে আমেরিকা এখনো বিশাল এবং সম্ভাবনাময়।

আমেরিকার বাজারে পোশাক রপ্তানির কারণ হিসেবে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আমাদের সময়কে বলেন, আমার নিজের কারখানার পণ্যও আমেরিকায় রপ্তানি কমেছে। তবে অন্যান্য দেশ যেমনÑ জাপান, চীন, দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি বেড়েছে। তবে এসব বাজারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া যায় না। তিনি বলেন, করোনা মহামারীর কারণে পুরো বিশ^ লকডাউন ছিল। অর্থনৈতিকভাবে বিশ^ বিপর্যস্ত হয়। আমেরিকাও এর বাইরে ছিল না। সেই করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ^জুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদেরও পোশাকের প্রতি চাহিদা কমে গেছে। বছরে যে পাঁচ সেট কাপড় পরত, সে এখন তিন সেট পরে। এভাবেই কমতে থাকে। এ ছাড়াও এর আগের বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক পোশাক নেয় আমেরিকা। বিক্রি করতে না পারায় সেগুলো স্টকে থেকে যায়। এ কারণেও অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। সব মিলে স্টকের পোশাক শেষ হলে এবং মূল্যস্ফীতি কমলে আবারও তাদের চাহিদা বেড়ে যাবে। আশা করা যায়, আমেরিকার বাজারও বাংলাদেশের জন্য আরও প্রসারিত হবে।

এদিকে নিট পোশাক শিল্প-মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান আমাদের সময়কে বলেন, আমেরিকার বিকল্প বাজার ভাবার সুযোগ নেই। আমেরিকার মতো সক্ষমতা অন্যদের এখনো তৈরি হয়নি। আমেরিকার বাজারকেই আরও জোরালোভাবে ধরতে হবে। কারণ একক দেশ হিসেবে সেটা অনেক বড় বাজার। এই বাজার হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। তবে অন্য বাজার- বিশেষ করে ভারত, চীন ও জাপানের দিকে সরকািশেষ নজর দিতে হবে। নীতি সহায়তার পাশাপাশি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।