লন্ডনে জন্ম নেওয়া কোহলি পুত্র কোন দেশের নাগরিক?
দ্বিতীয় সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন বিরাট কোহলি ও আনুশকা শর্মা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পুত্রসন্তানের মা-বাবা হওয়ার সুসংবাদ দেন আনুশকা ও বিরাট কোহলি। এই তারকা দম্পতি জানিয়েছেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে।
এই তারকা দম্পতি যৌথ বিবৃতিতে সদ্যোজাত সন্তানের জন্য সবার শুভকামনা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতিও সম্মান দেখানোর অনুরোধ করেছেন।
গত মঙ্গলবার ইনস্টাগ্রামে কোহলি লিখেছেন, আপনাদের সকলকে খুশির সঙ্গে জানাচ্ছি, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের পরিবারে একজন পুত্র সন্তানের আগমন ঘটেছে। যার নাম রাখা হয়েছে ‘আকায়’। আপনাদের সকলের আশীর্বাদ ও দোয়া কামনা করছি। আমরা অনুরোধ করছি, আমাদের গোপনীয়তাকে আপনারা সম্মান করবেন।
তাদের প্রথম সন্তান ভামিকার জন্ম হয়েছিল মুম্বাইয়ে। পুত্র আকায়ের জন্ম হয়েছে লন্ডনে। তবে জন্মের পর সরাসরি কোনো দেশেরই নাগরিক হতে পারেনি কোহলি পুত্র আকায়। কারণ জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই তার। এখন প্রশ্ন, কোন দেশের নাগরিকত্ব পাবে বিরুস্কা-পুত্র?
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, কোহলি-আনুশকার সন্তান হওয়ায় ভারতের নাগরিক হওয়ার কথা আকায়ের। কিন্তু সরাসরি ভারতের নাগরিক হওয়ার সুযোগ নেই। পুত্রকে ভারতের নাগরিক করতে হলে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে এই দম্পতিকে। বংশানুক্রমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারে আকায়। তবে মানতে হবে কিছু শর্ত। ভারতের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বা তার পর বিদেশে জন্ম হলে তার বাবা-মাকে ভারতের নাগরিক হতে হবে সেই সময়। ভারত সরকারকে জানাতে হবে, নাবালকের (১৮ বছরের কম) কাছে অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট নেই। পাশাপাশি, জন্মের এক বছরের মধ্যে যে দেশে জন্ম, সে দেশের ভারতীয় দূতাবাসে নথিবদ্ধ করানো থাকতে হবে। এক বছর সময় কালের মধ্যে নথিবদ্ধ করানো না হলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নিয়ে নথিবদ্ধ করাতে হবে।
ফলে ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসে আকায়ের জন্ম নথিবদ্ধ করাতে হবে কোহলি-আনুশকাকে। তার পর আবেদনের ভিত্তিতে বংশানুক্রমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে অকায়।
এদিকে লন্ডনে জন্ম হওয়ায় ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবিদার আকায়। সে ক্ষেত্রেও কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। জন্মসূত্রে সরাসরি নাগরিকত্ব এখন আর দেয় না সে দেশের সরকার। ব্রিটেনের নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার সুযোগ থাকলেও রয়েছে কিছু শর্ত। নাগরিকত্ব আইন আগের তুলনায় কঠোর করেছে ব্রিটিশ সরকার।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করলেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না। নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে জন্মের তারিখ এবং শিশুর বাবা-মায়ের পরিস্থিতি, অবস্থানের ওপর। যেহেতু আকায়ের জন্ম হয়েছে ২০২১ সালের ১ জুলাইয়ের পর, তাকে জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক হতে হলে কোহলি অথবা অনুশকার এক জনকে ব্রিটেন বা আয়ারল্যান্ডের নাগরিক হতে হবে। কোহলি বা আনুশকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের কোনো দেশের নাগরিক হলেও জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক হতে পারবে আকায়। এ ছাড়া কোনো ব্রিটিশ নাগরিক সরকারি ভাবে আকায়কে দত্তক নিলে, জন্মসূত্রে সে দেশের নাগরিকত্ব পাবে। সে ক্ষেত্রে ব্রিটেনের কোনো আদালতের মাধ্যমে দত্তক নিতে হবে।
তবে এই তিন শর্তের একটিও আকায় পূরণ করতে না পারলেও জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক হওয়ার দাবি রাখে। সে ক্ষেত্রে তাকে টানা তিন বছর ব্রিটেন বা আয়ারল্যান্ডে বসবাস করতে হবে। সেই নথি দিয়ে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করতে হবে। আবেদন খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে ব্রিটিশ প্রশাসন। কোহলি বা অনুশকার কাছে ২০২১ সালের ১ জুলাইয়ের আগে ব্রিটেনে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার অনুমতি থাকলে বা তারা আবেদন করে থাকলে বাড়তি সুবিধা পাবে আকায়। স্থায়ী ভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার দিন থেকে অকায় ব্রিটেনের নাগরিক হিসাবে গণ্য হবে। জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হবে। অর্থাৎ, জন্মসূত্রে সরাসরি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব না পেলেও সে দেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে আকায়ের।
যদিও ভারত দ্বৈত নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই আকায়কে ব্রিটেন অথবা ভারত— যে কোনো একটি দেশের নাগরিকত্ব বেছে নিতে হবে। জন্মসূত্রে ব্রিটেনের অথবা বংশানুক্রমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারে সে। সব কিছুই নির্ভর করবে বিরুস্কার সিদ্ধান্তের ওপর।