নিয়মের তোয়াক্কা করেন না সিএমও তানভীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) ডা. মো. তানভীর আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তিগত কাজে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবহার, অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, পদোন্নতি আটকানোর ভয় দেখিয়ে সিএমও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। অভিযোগ-সংক্রান্ত ছবি, ভিডিও, কল রেকর্ডিংসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমাদের সময়ের হাতে এসেছে। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. তানভীর।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালের অ্যাম্বুলেন্স মূলত চারটি। এগুলো নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন সিএমও। প্রতিদিন সকাল ৭টায় একটি অ্যাম্বুলেন্স বেইলি রোডের বাসা থেকে তার ছেলেকে ধানমন্ডি-১১তে সানি ডেইল স্কুলে দিয়ে আসে। এ সময় একজন অফিস পিয়নও তার সঙ্গে থাকেন। এরপর তিনি আবার সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে অফিসে যান। ছেলেকে স্কুল থেকে ফেরাতে দুপুরে যায় আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স। বিকালে এক অ্যাম্বুলেন্সে ডা. তানভীর বাসায় ফেরেন। ছুটির দিনেও (শুক্র ও শনিবার) তিনি অ্যাম্বুলেন্স নিজের কাজে ব্যবহার করেন। প্রতিমাসে অন্তত দুই শুক্রবার তিনি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বনানী কবরস্থানসংলগ্ন মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে তিনি বনানী লেকপাড় সংলগ্ন তার বন্ধুর বাসায় গিয়ে আড্ডা দেন। বিকাল ৩টার দিকে আরেকটি গাড়ি গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স কারও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের নিয়ম নেই।
গত রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স অনুসরণ করেন এই প্রতিবেদক। অনুসরণ করার পর অভিযোগের সত্যতাও মেলে। দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অ্যাম্বুলেন্সে (ঢাকা মেট্রো-ছ ৭১-২৮০২) করে তিনি তার ছেলেকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আবার সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজ কার্যালয়ে ফিরছেন। এ সংক্রান্ত ভিডিও এবং ছবি আমাদের সময়ের কাছে সংরক্ষিত আছে।
তবে ডা. তানভীর আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি শুধু সকালবেলা ছেলেকে নামিয়ে দিতে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করি।’ শুক্রবারে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বনানী যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। সেখানে আমার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাই।’ ব্যক্তিগত গাড়ি থাকতেও তিনি অ্যাম্বুলেন্স কেন ব্যবহার করেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আগে থেকে চলে আসছে। আগের সিএমওদেরও প্রতিদিন অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হতো।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে আগাছা পরিষ্কারের নামে তিনি গত এক মাস ধরে বন্ধের দিনগুলোতে নিজে উপস্থিত থেকে একের পর এক গাছ কেটেছেন। ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরনো গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলেছেন। এসব গাছ তিনি তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাছ কাটার দায় এড়াতে তিনি মেডিক্যাল সেন্টারের পূর্ব পাশের ভবনের উত্তর কোনার কার্নিশ ভাঙেন। তার কথায় অফিস পিয়ন মো. মনির এই কাজ করেন। এ ছাড়া গাছ কাটা থেকে শুরু করে তা বিক্রি করা পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন পিয়ন মনির। বন্ধের দিনে গাছ কাটার জন্য মনিরসহ আরেক পিয়ন মো. আলম হোসেন জয় এবং মেডিক্যাল সটার (যিনি টোকেন বিতরণ করেন) আবদুল আল মামুনকে ওভারটাইম দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ক্যাম্পাসের গাছ কাটা বা ডাল ছাঁটা- যেকোনো কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি কালচার সেন্টারের অনুমতি নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি বলে জানান সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা।
ডা. তানভীর বলেন, গাছ কাটার জন্য আরবরি কালচারকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি। ওনারা বলছে সময় দিতে। যেহেতু ঝোপঝাড় হয়েছে, সে জন্য কেটেছি। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ওপর চাপ আসে। এসএসএফ আসে, তারা ছাদের ওপর দাঁড়ায়। আমরা কোনো গাছ উপড়ে ফেলি নাই। সব গাছ ঠিক আছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এ ছাড়া সেন্টারের ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ডা. তানভীর রোগী দেখেন না। এরপরও তিনি কল ভাতা নেন। ডাক্তার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। আনঅফিসিয়ালি ইচ্ছেমতো তিনি ডিউটি চাপিয়ে দেন সবার ওপর। অফিস স্টাফকে দিয়ে তিনি সার্বক্ষণিক বাসার কাজ করান। এ ছাড়া সবাইকে তিনি পদোন্নতি আটকে দেওয়ারও ভয় দেখান।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাকে প্রমাণাদি সরবরাহ করবেন। চিন্তা নেই, আমরা আছি। আমি আরও অনেকের কাছে তার ব্যাপারে শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম