রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নতুন কৌশল
রমজান মাস সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধে এবার শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আহসানুল ইসলাম টিটু নতুন কৌশল নিয়েছেন, যা শিগগির কার্যকর হতে যাচ্ছে। এটি কার্যকর হলে ভোক্তা সুফল পাবে।
নতুন করে সরকার গঠনের পর গত ১৩ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নিয়মিত মজুদবিরোধী অভিযান পরিচালনারও নির্দেশ দেন তিনি। এরপর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তী সময়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে। সেখানে বাণিজ্য, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সেই বৈঠকে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নতুন কৌশল নিয়েছেন। এর মধ্যে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের দাম সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট চালু করা হবে। পাশাপাশি বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়াও ভোজ্যতেল-চিনির মূল্য কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পণ্যের কৃত্রিম সংকট প্রতিরোধে সরকারি ওয়েবসাইটে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের দাম, উৎপাদনের স্থান এবং পণ্য সরবরাহ ও মজুদ সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। আগামী মার্চ মাসের শুরুতেই পণ্য সংক্রান্ত এই ওয়েবসাইটটি চালু করা হবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
অন্যদিকে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি এবং পণ্যের কৃত্রিম সংকট প্রতিরোধে সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড় করতে বন্দর ও কাস্টমসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পণ্যবাহী ট্রাক চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে সক্রিয় থাকবে হাইওয়ে পুলিশ। ফেরিঘাটে পণ্য পারাপারে অগ্রাধিকার দেবে বিআইডব্লিউটিএ। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পণ্যের দাম বেশি রাখা হলে একজন ভোক্তা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
এদিকে রমজান সামনে রেখে ইতোমধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুরের ওপর শুল্ক ও করছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুল্ক কমানোর এই সুবিধা দ্রুত বাজারে কার্যকর করতে ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনা এবং শুল্ক কমানোর ফলে দেশে কতটুকু দাম কমানো যৌক্তিক হবে. সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
জানা গেছে, চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, আটাসহ অত্যাবশ্যকীয় ১৭টি পণ্যের পাশাপাশি যাবতীয় ভোগ্যপণ্যের স্থানীয় বাজার দর এবং আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। একইসঙ্গে ঢাকার কোনো বাজারে কোনো পণ্য কী দামে বিক্রি করা হচ্ছে সেটিও ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকবে। অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন জেলার উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে কী দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে সেটি ঢাকা কিংবা রাজশাহীর একজন ভোক্তা কিংবা ব্যবসায়ী ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারবেন। একইভাবে প্রতিবেশী ভারত কিংবা চীন ও ব্রাজিলে চিনির দাম কত এবং দেশে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেটিও যাচাই করার সুযোগ থাকবে। এতে ভুলতথ্য উপস্থাপন করে বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধ হবে বলে আশা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে প্রয়োজনে সেই অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করতে পারবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, রোজায় ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহ ও দাম নিয়ে যাতে কোনো বিভ্রান্তি না থাকে, সে জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে সেটির বাস্তবায়ন হবে। এছাড়াও সরবরাহ ব্যবস্থায় যাতে কোনো বাধা না থাকে, সেজন্য স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম