রাখাইনে জান্তা বাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে

থ্রি ব্রাদারহুডের দাবি ।। টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ কমেছে ।। উখিয়া সীমান্তে নিখোঁজ বাংলাদেশি জেলের মরদেহ উদ্ধার

আমাদের সময় ডেস্ক
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
রাখাইনে জান্তা বাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে


মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা সরকারের অনুগত বাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির তিন সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনের জোটÑ ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’। গত রবিবার রাতে জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা খুব শিগগিরই আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করবেন।

২০১৯ সালের জুনে আত্মপ্রকাশ করা এই জোটের তিন সদস্য হলোÑ আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। রবিবার রাতে তাদের বিবৃতির বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে ঢাকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘নারিনজারা নিউজ’। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত আরাকানের কিছু গণতন্ত্রপন্থি লোকজন ২০০১ সালে এই সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেন।

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বিবৃতির বরাত দিয়ে ‘নারিনজারা নিউজ’ জানায়, রাখাইনে সামরিক বাহিনীর ছোট-বড় যত ক্যাম্প আছে, তার প্রায় সবগুলোই এখন আরাকান আর্মির দখলে। এসব ক্যাম্পের জান্তা অনুগতরা শিগগিরই আত্মসমর্পণ করবেন। এর বাইরে যেসব ক্যাম্প এখনো আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে গতকাল রাতে আরেকটি খবর প্রকাশ করে ‘নারিনজারা নিউজ’। এতে বলা হয়, রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল মংডুর মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কমান্ডাররা। তারা বৈঠকে মুসলিম নেতাদের প্রস্তাব দিয়েছেন, যদি তারা জান্তা বাহিনীর হয়ে কাজ করেন, তা হলে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।

বৈঠকে উপস্থিত এক মুসলিম নেতার বরাত দিয়ে নারিনজারা নিউজ জানায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মংডুর ময়ো থু গি গ্রামের ৫ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বৈঠকটি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জান্তার ডিভিশন কমান্ডার থুরেন তুন এবং বিভাগীয় প্রশাসক নায়ো ও।

ওই মুসলিম নেতা নারিনজারা নিউজকে বলেন, ‘বৈঠকে কমান্ডার থারুন তুন আমাদের বলেছেন, আরাকান আর্মিদের কারণে মুসলিমরা ভুগছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র তুলে নেওয়া উচিত। এমনকি এই কমান্ডার আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন, যদি আমাদের গ্রামের কাছে যুদ্ধ শুরু হয়, তা হলে সেনারা আমাদের গ্রামে হামলা চালাবে না। তারা শুধু রাখাইনের গ্রামে হামলা চালাবে। এ জন্য আমরা যেন জান্তার হয়ে কাজ করি।’

তবে বৈঠকে উপস্থিত মুসলিম নেতাদের একটি অংশ বলেছেন, যদি তাদের সত্যিকার অর্থে মিয়ানমারের নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়, তা হলে তারা এই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবেন। তবে বেশিরভাগ নেতা এতে রাজি হননি।

নারিনজারা নিউজের মতে, মংডুর পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আরেক অঞ্চল বুচিডংয়েও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জান্তার কমান্ডাররা। সেখানেও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে মুসলিমদের উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।

দৈনিক আমাদের সময়ের নিজস্ব প্রতিবেদক (কক্সবাজার) জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কয়েকদিন ধরে টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলির যে শব্দ আসছিল, তা অনেকটাই কমে গেছে। গতকাল সকালের পর থেকে গুলির শব্দ ‘তেমন শোনাই যায়নি’।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে গত মাস থেকে লড়াই চলছে। এ কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এবং কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতের বিল ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাচ্ছিলেন স্থানীয়রা। টেকনাফ বাদে বাকি সীমান্ত এলাকাসমূহে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, গত রবিবার সকালে শাহ পরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর রাতে এবং গতকাল সকালে কিছু গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর থেকে গুলির শব্দ তেমন শোনা যায়নি।

টেকনাফের সেন্টমার্টিনেও গতকাল গোলাগুলির শব্দ কম শোনা গেছে। স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা দশ থেকে পনেরো বার গুলির মৃদু শব্দ শুনেছেন।

এদিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমানপাড়া সীমান্ত থেকে নিখোঁজ বাংলাদেশি জেলে মোস্তাফিজের মরদেহ পাওয়া গেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি নাফ নদে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। স্থানীয়দের ধারণা, মোস্তাফিজ অপহরণের শিকার হয়েছিলেন।

গত রবিবার রাতে সীমান্ত খালের পাশে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় মোস্তাফিজের মরদেহ পাওয়া যায়। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন জানান, মোস্তাফিজের গায়ে মারধরের আঘাত রয়েছে।

৪০ রোহিঙ্গা আটক

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, অনুমতি না নিয়ে আশ্রয়শিবির (ক্যাম্প) ছাড়ার অভিযোগে ৪০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে তাদের আটক করা হয়।

উখিয়া-৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর জানান, ক্যাম্পের কাঁটাতার কেটে রোহিঙ্গারা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল একটি চেকপোস্ট বসানো হয় উখিয়া ডিগ্রি কলেজে এলাকায়। সেখানে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে ৪০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তাদের কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আমির জাফর জানান, ৪০ জনের বাইরে একই অভিযোগে চলতি মাসে ৫১১ জনকে আটক করে ক্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ায় তারা মূলত ক্যাম্প ছাড়ার চেষ্টা করছেন।