গ্যাস অনুসন্ধানে আর বসে থাকা যাবে না
জ্বালানি সংকট দূর করতে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আমরা যে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে চাই, সেই লক্ষ্য পূরণে যত শীঘ্রই হোক আমাদেরকে গ্যাসের অনুসন্ধানে নেমে পড়তে হবে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ জোর দিতে না পারলে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সও টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, এই বছর থেকেই আমরা কাজ শুরু করতে চাই। আরও ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী দুই বছরে আরও ৬০০ থেকে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত করতে চাই।
সিলেটে তিন দিনের সফরে এসে প্রথম দিন গতকাল শনিবার অনুসন্ধান কূপ কৈলাশটিলা-৮ নম্বর কূপ খনন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ দিন তিনি সিলেট হরিপুরে ১০ নম্বর কূপ খনন কার্যক্রম পরিদর্শন এবং সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ডাটা সেন্টার উদ্বোধন করেন। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লা, বাপেক্সে এমডি মো. শোয়েব ও জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির এমডি আতিকুর রহমান।
কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ডে আরও গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ফিল্ডে আগে ৩ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ ছিল। অনুসন্ধান কূপ খনন করায় মজুদ আরও ১ দাশমিক ৩ টিসিএফ বাড়ানো যাবে। কয়েক মাসের মধ্যে এই গ্যাস পাইপলাইনে নিয়ে আসতে পারব।
জানা গেছে, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার কারণে ২০৩০ সালে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা হতে পারে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। বিশাল এই চাহিদার কথা চিন্তা করেই সরকার দেশীয় তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে ব্যাপক কর্মতৎপরতা শুরু করেছে। পাশাপাশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়াতে কাতার ও ওমানের পর মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল এলএনজিসহ মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৭১ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল ঘাটতি ছিল এক হাজার ৩২৯ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় শিল্পকারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সংকটে পড়েছে। সংকট চলছে আবাসিকেও। ঘাটতি পূরণে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। দেশে চলমান ডলার সংকটের জন্য এটিও একটি কারণ বলে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশে প্রতিদিন আরও এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। দেশীয় গ্যাসফিল্ড থেকে এ গ্যাস পেলে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকা খরচ হয়। একই পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে ৬০ টাকা খরচ হয়। এত টাকা কোথায় থেকে দেবে সরকার? মাত্র ২০ থেকে ২৩ শতাংশ গ্যাস আমদানি করি। এই অর্থ যদি বাঁচাতে পারি তা হবে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কৈলাশটিলায় এর আগে ৭টি কূপ খনন করা হয়েছে, প্রতিটা কূপেই গ্যাস পাওয়া গেছে। এই কূপটি ৩৫০০ মিটার খনন করে ১ টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এর আগে গতকাল সকালে সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ডাটা সেন্টার উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি এই বিতরণ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন। এই সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী চার বছরের মধ্যে দেশের সব গ্যাসের গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে। তিনি বলেন, ‘জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি ৫০ হাজার গ্রাহককে ইতিমধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এনেছে। ধাপে ধাপে সিলেট অঞ্চলের সব গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে। প্রিপেইড মিটারের ফলে গ্যাসের অপচয়রোধ হবে এবং গ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে। আগামী দুই বছরের ভেতরে জালালাবাদের সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে আপনারা দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
পরে গতকাল বিকালে সিলেট হরিপুরে ১০ নম্বর কূপ খনন কার্যক্রম পরিদর্শনে যান প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন কর্মতৎপরতার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে সিলেট ১০ নম্বর কূপ। চেষ্টা করলে যে অবশ্যই পারা যায় এটি তার একটি প্রমাণ। যত শীঘ্রই হোক আমরা এই তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহারটি করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা আরও দুটি কূপ খনন করব। আমরা আশাবাদী এ এলাকায় আরও অনেক বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।’
নতুন পরিকল্পনার বিষয় জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ৪৬টি কূপ খননের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের একসঙ্গে ছয়টি রিগ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বাপেক্সের রয়েছে মাত্র চারটি রিগ। এখন নতুন করে আরও ১০০টি কূপ খননের যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেখানে সমান্তরালভাবে আরও ছয়টি রিগ প্রয়োজন। এ জন্য বাপেক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে কূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। যদিও জোরালো উদ্যোগটি আরও আগেই নেওয়ার উচিত ছিল, তাহলে এর সুফল আমরা এখন পেতাম। গ্যাস সংকটের মধ্যে আমাদের পড়তে হতো না। স্থলভাগের পাশাপাশি সমুদ্রেও গ্যাস অনুসন্ধানের জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন