মেলায় বসন্তের আবহ
সাপ্তাহিক ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার অমর একুশে বইমেলায় ছিল বসন্তের আবহ। রঙিন শাড়ি, খোঁপায় বাহারি ফুল পরা তরুণীদের পাশাপাশি পুরো মেলা মাতিয়ে তোলে নানা বয়সের মানুষ। বেলা ১১টায় মেলার দুয়ার খোলার আগে টিএসসি ও দোয়েল চত্বর মোড় থেকে জনস্রোত মেলার দিকে এগোতে থাকে। বিকাল নাগাদ কোথাও যেন ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। এদিন বইমেলায় আসা তারুণ্যের উচ্ছ্বাসও ছিল বাঁধভাঙা। প্রবেশ ফটকে দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে ঢুকতে হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে।
ফাগুনের প্রথম শিশুপ্রহর ছিল গতকাল। সকাল থেকে শিশুদের নিয়ে মেতে উঠে হালুম ও টুকটুকিরা। দুপুর থেকে সিসিমপুর মঞ্চে শিশুদের নিয়ে ছিল নানা আয়োজন। এই চত্বরে শিশুবিষয়ক প্রকাশনীগুলোও ভালো বিক্রির কথা জানা যায়।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন শিশুপ্রহরে ছেলে জামিন ও মেয়ে জয়ন্তীকে নিয়ে মেলায় আসেন। তিনি বলেন, আমি নিজে বই পড়তে পছন্দ করি। এদের জন্য এবং নিজের জন্য কয়েকটি বই কিনবো। সিসিমপুর মঞ্চে হালুম ও টুকটুকিদের কাছেও নিয়ে যাব। এগুলো দেখে ওরা খুবই আনন্দ পায়।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান কাজল বলেন, ছুটির দিন এলে মেলা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। দেখতে দেখতে মেলার অর্ধেকটা সময় কেটে গেল। আশা করা যায় মেলার বাকি দিনগুলো বিক্রি ভালোই হবে।
গতকাল শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ছিল ১৬তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ২৯৮টি।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : গতকাল সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ক-শাখায় ১ম হয়েছেন ফারহিনা মোস্তাক আযওয়া, ২য় হয়েছেন অংকিতা সাহা রুদ্র এবং ৩য় হয়েছেন ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া। খ-শাখায় ১ম হয়েছেন সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, ২য় হয়েছেন সুবহা আলম এবং ৩য় হয়েছেন অন্বেষা পণ্ডিত এবং গ-শাখায় ১ম হয়েছেন সিমরিন শাহীন রূপকথা, ২য় হয়েছেন আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং ৩য় হয়েছেন তাজকিয়া তাহরীম শাশা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
মূলমঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারিসুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, ফজিলাতুন নেছা মালিক এবং এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ।
লেখক বলছি : লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ড. এম আবদুল আলীম, কথাসাহিত্যিক নাহার মনিকা, কবি স্নিগ্ধা বাউল এবং শিশুসাহিত্যিক অপু বড়ুয়া।
সাংস্কৃতিক আয়োজন : কবিতা পাঠ করেন সুজন বড়ুয়া, মৌলি আজাদ, মাসরুরা লাকী, রিপন আহসান ঋতু এবং মমতাজ রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সোহরাব হোসেন, সাধন কুমার দাশ, দেবাশীষ রুদ্র, ফারহানা পারভীন হক তৃণা এবং নূরননবী শান্ত। এছাড়াও ছিল ফয়জুল্লাহ সাঈদের নির্দেশনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শিল্পবৃত্ত’ ও ‘ঢাকা স্বরকল্পন’-এর পরিবেশনা এবং তাপস মজুমদারের পরিচালনায় ‘ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মো. জাকির হোসেন হাওলাদার, শফি মণ্ডল, আরতি রানী সেন, দেবোরাহ জান্নাত, নিজাম উদ্দিন লালনী, রাজিয়া সুলতানা এবং মোসা. নিপা আক্তার।
আজকের আয়োজন : আজ শনিবার অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে দুপু ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : আজ সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : শহীদ সাবের এবং স্মরণ : পান্না কায়সার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন গিয়াস উদ্দিন, সুভাষ সিংহ রায়, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।
চট্টগ্রাম বইমেলায় বিক্রি কম
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, শুক্রবার ছুটির দিন। অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি দেখা যায় পাঠকদের আনাগোনা। গতকাল ভরদুপুরেও চট্টগ্রামের সিআরবি শিরিষতলার বইমেলায় ভিড় লেগে ছিল। বিকাল নাগাদ দর্শনার্থীর পদভারে আরও জমজমাট হয়ে ওঠে অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ। তবে বই বিক্রি তেমন নেই বলে জানিয়েছেন স্টল মালিক ও বিক্রেতারা। বিক্রি কমার জন্য মেলার স্থান পরিবর্তন, নিরাপত্তা ও প্রচারের ঘাটতিকে দুষছেন তারা। এমনকি মেলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত একাধিক ছিনতাই ও চুরির ঘটনার শিকার হয়েছেন মেলাসংশ্লিষ্টরা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে বইমেলা। আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রথমবারের মতো সিআরবিতে আয়োজিত মেলার আয়তন ৪৩ হাজার বর্গফুট। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৯২টি প্রকাশনা সংস্থার ১৫৫টি স্টল আছে। এবারের মেলায় প্রথম থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও বই বিক্রি তেমন নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি ফাইরুজ ওয়াসিমা আমাদের সময়কে বলেন, মেলায় যে হারে মানুষ এসেছেন সে হারে বিক্রি হয়নি বই।
মেলা ঘিরে নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে অভিযোগ করে অন্যধারা প্রকাশনী স্টলের প্রতিনিধি ইমরান খান আমাদের সময়কে বলেন, মেলায় নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ঘাটতি আছে। বৃহস্পতিবার স্টল থেকে চার্জার, কি-বোর্ড ও মাউসসহ একটা ব্যাগ চুরি হয়েছে আমার। নিরাপত্তায় দায়িত্বরত কর্মীদের জানিয়েছি বিষয়টি। তারা তেমন আমলে নেননি।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
বইমেলায় নিরাপত্তার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে জানান, মেলায় সার্বক্ষণিক পাঠক ও স্টল পরিচালকের নিরাপত্তায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। তবুও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।