সাড়ে ৩ মাস পর কারামুক্ত মির্জা ফখরুল-আমীর খসরু

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি, গাজীপুর প্রতিনিধি ও আদালত প্রতিবেদক
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সাড়ে ৩ মাস পর কারামুক্ত মির্জা ফখরুল-আমীর খসরু

সাড়ে তিন মাস পর জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তারা মুক্ত হন। এর আগে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে মুক্ত হন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

গত ২৯ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গুলশানের বাসা থেকে এবং ২ নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গুলশানের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ এবং ২৮ অক্টোবর

বিএনপির মহাসমাবেশের

দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরও আগে, গত ১০ অক্টোবর গভীর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসা থেকে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে ধানমন্ডি থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গতকাল বিকাল পৌনে ৪টায় মির্জা ফখরুলকে এবং এর ৪ মিনিট পর আমীর খসরুকে কারাগারের প্রধান ফটকে নিয়ে আসা হয়। এ সময় কারাফটকে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল নামে। তারা মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে এবং ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে নেতাদ্বয়কে বরণ করে নেন।

এ সময় সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে। এ সংগ্রামে তারা জয়ী হবে। গণতন্ত্র ফেরানোর চলমান আন্দোলন বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রশক্তিকে কব্জা করে ক্ষমতা দখল করেছে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নির্বাচনে নৈতিকভাবে জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে। যতদিন দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে- ততদিন এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন, সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, শায়রুল কবির খানসহ অঙ্গ-সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। এ ছাড়া মির্জা ফখরুলের সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম এবং তার একান্ত সহকারী ইউনুস আলী; আমীর খসরুর ছেলে ইসরাফিল খসরুও কারাফটকে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুর গাড়ি কর্ডন করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৌঁছান বিএনপির সদ্য কারামুক্ত নেতারা। সেখানে তাদের শুভেচ্ছা জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিনসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। পরে মহাসচিব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময় করে গুলশানের বাসায় যান।

এর আগে এ দুই নেতার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে যেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেসব মামলায় আদালত থেকে উনারা জামিন পেয়েছেন। যেহেতু ওইসব মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ছিল সেসব ওয়ারেন্টগুলো প্রত্যাহার করার আইনি বিধান রয়েছে। ওইসব প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছালে তারা মুক্ত হন। অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, বিএনপি মহাসচিবের ১৩টি মামলায় প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ছিল।

ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের বিএনপির এ দুই জ্যেষ্ঠ নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। এই মামলার জামিনের আগে আরও ১০টি মামলায় তাদের জামিন হয়েছে। মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুর আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন গতকাল বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা জামিন দেন আদালত।

গত বুধবার পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের বিএনপির এ দুই নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মো. আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। আসামিদের অসুস্থতা, বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে জামিনের প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু। তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ২৮ অক্টোবর এবং এর পরের সংঘর্ষ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে ১১টি মামলা হয়। এর আগে ১০টি মামলায় তিনি জামিন পান। অন্যদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়। এর আগে তিনি ৯টি মামলায় জামিন পান। দলের দুই শীর্ষ নেতাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন পেয়েছেন।

আলতাফের জামিন পেতে বাধা আরও দুই মামলা

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী রমনা থানার নাশকতার আরেক মামলায় জামিন পেয়েছেন। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুলতানা সোহাগ উদ্দিন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ জানান, এখন রমনা থানার প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলা ও ২১ মাসের কারাদ- হওয়া একটি নাশকতার মামলায় জামিন পেলেই তিনি কারামুক্ত হতে পারবেন। গত ৫ নভেম্বর ভোরে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। ওইদিনই তাকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে নাশকতা ও ভাঙচুরের এক মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। সেদিন তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন।