চালের গুদাম ভর্তি ,ধান সংগ্রহে ভাটা

সৈয়দ রিফাত
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
চালের গুদাম ভর্তি ,ধান সংগ্রহে ভাটা

চলতি আমন মৌসুমে সরকারের সংগ্রহ অভিযানে সেদ্ধ চাল লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছলেও ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও নেই। গত বছরের ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া আমন মৌসুমের এই সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের ৮ বিভাগে ২ লাখ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ধান সংগ্রহ হয়েছে ২১ হাজার ৬৬ মেট্রিক টন। শতকরা হিসাবে যা মাত্র ১০.৫৩ শতাংশ। আর আতপ চাল সংগ্রহের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ মেট্রিক টন। পরবর্তী সময় তা আরও ৫০ হাজার টন বাড়ানো হয়। এ পর্র্যন্ত ৬০ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪০ শতাংশ। অধিদপ্তরের ভাষ্য, আতপ চালের ভোক্তা কম, চালের মজুদও সন্তোষজনক। সেদ্ধ চাল প্রাথমিকভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তী সময় তা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন করা হয়। এর বিপরীতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। যা লক্ষ্যমাত্রার ৮৭.৫১ শতাংশ। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সেদ্ধ চালের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে।

এবার সরকারের সংগ্রহ অভিযানে প্রতি কেজি আমন ধানের দাম ৩০ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা ও আতপ চাল ৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে খোদ বাড়িতে বসেই ধান বিক্রি করছেন তারা। উপরন্তু সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে মানতে হয় বেশকিছু নিয়ম-কানুন। এর সঙ্গে রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্যও।

খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে অনাগ্রহী কৃষকরা। তারা বলছেন, সরকারি দামে ধান বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কৃষক শুভেন্দু দাস বলেন, সরকারি গুদামে প্রতি মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০০ টাকা দরে। অথচ বাড়িতে প্রতিমণ ধান ১২৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। তাহলে গাড়ি ভাড়া করে গুদামে ধান বিক্রি করে লোকসান গুনব কেন?

গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে দালালদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ করেন সাতক্ষীরার কৃষক দেবনাথ। তিনি বলেন, গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে টাকা পেতে দেরি হয়। তা ছাড়া দালালরা ভালো ধান নিয়ে খারাপ ধান বিক্রি করে দেয়। এতে আমরা ভালো দাম পাই না।

তবে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতেই ধানের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়। তাই কৃষক যদি খোলাবাজারেই ভালো দাম পায় সেটাও তাদের সফলতা।

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায় এ কারণেই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়। আমরা লক্ষ্যমাত্রা কম দিলে মিলাররা ধানের দাম কমিয়ে দিত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষক।’

আতপ চালের বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মো মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আতপের ভোক্তা এলাকা সিলেট এবং চট্টগ্রাম হওয়ায় আমরা পরিবহন খরচ বাঁচাতে ওইসব এলাকা থেকেই সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ ছাড়া আমাদের আতপ চালের ভোক্তা এবং মিলের সংখ্যা কম, এ জন্য সংগ্রহও কম।’ আতপের যা সংগ্রহ আছে তাতে আরও দুমাস চলে যাবে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, এবারের আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। সংগ্রহের সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩-এর তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে (২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২) দেশে আমন উৎপাদনের পরিমাণ বছরে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টন থেকে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার টনের মধ্যে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চাহিদা মেটানোয় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আমন। এ কারণে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে বোরোর পর আমনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। জানা যায়, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং সরকারি গুদামে চালের নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলাই অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারের আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয় গত বছরের ২৩ নভেম্বর থেকে।

ধান সংগ্রহের বিভাগওয়ারি হিসাবে রাজশাহী বিভাগে হয়েছে ৭.৫৮ শতাংশ, রংপুরে ১৪.৪৮ শতাংশ, ঢাকায় ১৫.৬৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ০.০৩ শতাংশ, খুলনায় ১৪.৪৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭.০২ শতাংশ, সিলেটে ১১.৬৫ শতাংশ ও বরিশালে ১০.৭০ শতাংশ।

খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, দেশে মোট সেদ্ধ চালের মজুদ রয়েছে ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩০১ মেট্রিক টন এবং আতপ চালের মোট মজুদ রয়েছে ৫৬ হাজার ৫১৬ মে. টন। তারা বলছেন মজুদ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।