আশ্রিত জান্তা সদস্যরা আজ ফিরছেন

গভীর সমুদ্রে হবে হস্তান্তর ।। সীমান্তে শোনা যায়নি গুলির শব্দ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক; নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার; টেকনাফ ও উখিয়া প্রতিনিধি
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
আশ্রিত জান্তা সদস্যরা আজ ফিরছেন

রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের জেরে পালিয়ে আসা মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আজ ফেরত যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ফেরত পাঠানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। নিজেদের অনুগত সদস্যদের ফেরত নিতে গভীর সমুদ্রে জাহাজ পাঠিয়েছে মিয়ানমার। এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের ওপারে গতকাল বুধবার মিয়ানমারের মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ আর শোনা যায়নি।

গতকাল বুধবার দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ সীমান্তরক্ষীকে বৃহস্পতিবার ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার।

ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ সকালে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের কক্সবাজার ইনানী নৌ-জেটিতে নেওয়া হবে। এরপর তাদের বাণিজ্যিক জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদে গভীর সমুদ্রে নেওয়া হবে। সেখানে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে অপেক্ষমাণ জাহাজে তুলে দেওয়া হবে।

এর আগে জান্তা সদস্যদের সমুদ্রপথে ফেরাতে বাংলাদেশকে চিঠি দেয় মিয়ানমার। এরপর তাদের সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় পালিয়ে আসা জান্তা সদস্যদের আকাশপথে ফেরানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ আনা হয়। তবে মিয়ানমারের জান্তা সরকার গভীর সমুদ্রপথে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।

জানা গেছে, পালিয়ে আসা বিজিপি ও জান্তা অনুগত সেনাসদস্যদের একসঙ্গে ফেরত পাঠানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যে ৩৩০ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সবাইকে আজ ফেরত পাঠানো হবে।

সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে তুমুল লড়াই অব্যাহত থাকায় মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদের একটি জাহাজ ইয়াঙ্গুন থেকে সিত্তে পাঠিয়েছে। পরে সিত্তে থেকে জাহাজটি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকতের কাছে পৌঁছেছে। সেখান থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। যদিও এ মুহূর্তে সিত্তে বন্দরসহ রাখাইনের আশাপাশ এলাকায় মিয়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে মোতায়েন রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের ৩৩০ জান্তা অনুগত। নাফ নদ পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিজিপি, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার লোক রয়েছে। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়।

এদিকে, টানা চারদিন সীমান্তে বন্ধ রয়েছে মিয়ানমারের ওপারে মর্টার ও গুলির শব্দ। ভয় ও আতঙ্ক ছাপিয়ে গতকাল বুধবার তুমব্রু সীমান্তে সরস্বতী পূজা উদযাপন করেছেন হিন্দুসম্প্রদায়। তুমব্রু বাজার সংলগ্ন শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এ পূজা উদযাপন হয়।

মন্দির কমিটির সভাপতি ও স্কুলশিক্ষক রূপলা ধর বলেন, আমরা এর আগেও ২০২২ সালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের সময়ে মর্টার ও গোলাগুলির শব্দের মাঝেও দুর্গাপূজা পালন করেছিলাম। আজ (বুধবার) মন্দিরে উৎসবমুখর পরিবেশে সরস্বতীত পূজা পালন হয়েছে। অনেকেই আনন্দ উৎসবে মন্দিরে এসে পূজায় অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া এলাকার মুসলিমরা আমাদের সহযোগিতা করেন। এখানে যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণœœ রয়েছে।

এ ছাড়া আজ (বৃহস্পতিবার) সারাদেশে শুরু হওয়া মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় বসছেন ঘুমধুম সীমান্তের ৪৬১ পরীক্ষার্থী। তবে তাদের নিরাপত্তাজনিত কারণে পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, গত দুইদিন আগে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মিয়ানমারের মর্টার ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। বুধবার সারাদিন সীমান্তের কোথাও মর্টার ও গুলির শব্দ শোনা যায়নি। তবে মিয়ানমারের ওপারে সংঘাত এখনো চলছে বলে জেনেছি।