ডিসিদের জন্য দুই ডজন নির্দেশনা
নতুন সরকার গঠনের দুই মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন ২০২৪। আগামী ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদ্বোধনী সেশন অনুষ্ঠিত হবে এই সম্মেলনের। ৬ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হবে সমাপনী অধিবেশন। এবারের সম্মেলনে ডিসিদের বাজার মনিটরিং, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ; কৃষি পণ্য উৎপাদন-সংরক্ষণ, কৃষিজমি রক্ষা ও দখল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্তত ২৪টি ইস্যুভিত্তিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর কয়েকটি ইস্যুতে জোর দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকারের লক্ষ্য নতুন মন্ত্রিসভায় সদস্যদের অবহিত এবং করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকেও করণীয় নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত জেলা প্রশাসকরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. আমিন উল আহসান জানান, বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন হবে। তবে গত বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু হবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের কার্য-অধিবেশন থাকে। এ ছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও একটি সমাপনী অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ বছরের সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডিসিরা।
সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা লিখিতভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যাগুলো নিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এসব প্রস্তাবনা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগসংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে। এর জবাব থাকবে সম্মেলনের অধিবেশনে। এর বাইরেও অধিবেশনের সময় ডিসিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত কীভাবে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকবে জেলা প্রশাসকদের প্রতি। তারা প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে আলোচ্য ইস্যুতে থাকবে- নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া; পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা; নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা; মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখা; কৃষি উৎপাদন বাড়ানো; খাদ্য সংরক্ষণে সক্ষমতা বৃদ্ধি; জলাধার ভরাট দখল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ; কৃষিজমি নষ্ট না করা; তিন ফসলি জমি চিহ্নিত করা; জেলা পর্যায়ে পর্যটন বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া; পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া; জেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ; মাঠপ্রশাসনে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া; ছিনতাই, কিশোর গ্যাং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন; রপ্তানিযোগ্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া; সেচ মৌসুমে জ্বালানি সরবরাহ যথাযথ রাখা; জ্বালানি সাশ্রয়ী হতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা; সোলার এনার্জি ব্যবহারের উদ্বুদ্ধ করা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স; গুজব রোধে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা; শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মনিটরিং জোরদার করা; সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল সেবার পরিধি বাড়ানো; প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা; রাজস্ব বাড়ানোয় সহযোগিতা করা; জেলার ইকোনমিক জোন যথাযথ উন্নয়নে সহায়তা করা। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিষয় যুক্ত হবে সম্মেলনের আলোচনায়।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর (২০২০ ও ২০২১ সাল) ডিসি সম্মেলন হয়নি। এরপর ২০২২ সাসের ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি এ সম্মেলন হয়। গত বছর ডিসি সম্মেলন হয় ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি।