সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলির শব্দ

আব্দুল্লাহ মনির, টেকনাফ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:১৬
শেয়ার :
সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলির শব্দ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। রাজ্যের উত্তরের তুমব্রু, ঢেঁকুবনিয়া, তোতারদিয়াসহ কয়েকটি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটি দখলে নেওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

তবে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কুমিরখালী, চাকমাকাটা ও কোয়াংচিমন এলাকার দখল নিতে বেগ পেতে হচ্ছে আরাকান আর্মিকে। এ দুটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে গত পাঁচ দিন ধরে সেখানে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। তবে এখনো এলাকা দুটি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

রাখাইনের বলিবাজারের বাসিন্দা ও উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল হোছন জানান, কুমিরখালী, চাকমাকাটা ও কোয়াংচিমন এলাকাগুলো আয়তনে বড়। সেখানে মিয়ানমার বাহিনী এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তবে আরাকান আর্মি সেখানকার দখল নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে তুমব্রু থেকে উত্তরে একাধারে বিশাল এলাকা তাদের দখলে যাবে।

রোহিঙ্গা নুরুল হোছন রাখাইনে তার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছেন, রাখাইনের উত্তরে যে কয়েকটি এলাকা আরাকান আর্মি দখল করেছে, সেগুলো এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ঘাঁটিকেন্দ্রীক আরাকান আর্মি নতুন করে আরও শক্তি বৃদ্ধি করেছে। তারা চাচ্ছে দখল করা এলাকাগুলো যাতে তাদের হাতছাড়া না হয়।

রাখাইন রাজ্যের উত্তরে আরাকান আর্মির দখল করা ঘাঁটিগুলোতে নতুন করে হামলা চালাচ্ছেন না মিয়ানমার রাষ্ট্রীয় বাহিনী। তাই এপারে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তে গত চার দিন ধরে মর্টারশেল বা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। এসব এলাকার মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক অনেকটা কেটে গেছে। সীমান্তের ওপারে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তের যেসব গ্রামের লোকজন অন্যত্র সরে গেছেন, তাদের অনেকে ঘরে ফিরেছেন। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত বলতে আরও কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে জানান সীমান্তের লোকজন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গত দু-তিন দিন ধরে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কোথাও মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে না। এলাকার লোকজন আগের তুলনায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন। এরপরও নতুন করে ওপারে সংঘাত দেখা দিলে স্থানীয়দের নিরাপত্তায় প্রশাসনের নির্দেশনা মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তেও আগের মতো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি আজ মঙ্গলবার। তবে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে দিনে থেমে থেমে কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে সীমান্তের এপারে কোনো গুলি পড়ার ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের লোকজনও মঙ্গলবার সীমান্তের ওপারে গুলির শব্দ শুনেছেন।

হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, খুব বেশি মর্টারশেল ও গুলির শব্দ শোনা গেছে, তা নয়। সকাল থেকে থেমে থেমে কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে ওপারে হঠাৎ করে সংঘর্ষ বাড়লে এপারে মর্টারশেল ও গুলি এসে পড়ার আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় লোকজন।

রাখাইনের অভ্যন্তরে সংঘর্ষে টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন ধারণা করছেন। তবে সীমান্তের এপারে বিজিবি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ পর্যন্ত তারা ১৩৫ জন রোহিঙ্গাকে সীমান্তে অনুপ্রবেশে বাধা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।