জান্তা অনুগতরা ফিরে যাবেন চলতি সপ্তাহেই

রাখাইনে বাংলাদেশ মিশন সাময়িক বন্ধ

আরিফুজ্জমান মামুন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
জান্তা অনুগতরা ফিরে যাবেন চলতি সপ্তাহেই

রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাতের কারণে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনা সদস্যদের এ সপ্তাহেই ফেরত পাঠানো হবে। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ফেরত পাঠানোর দিনক্ষণ জানানো হয়নি।

বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনা সদস্যদের সমুদ্রপথে ফিরিয়ে নিতে গত সপ্তাহে বাংলাদেশকে চিঠি দেয় মিয়ানমার। বর্তমানে বাংলাদেশ জান্তা সদস্যদের সমুদ্রপথে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চলতি সপ্তাহেই ফেরত যাবেন জান্তা অনুগতরা।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে তাদের যেসব বর্ডার গার্ড, সেনাবাহিনী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে এসেছেন, তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। মিয়ানমার তাদের নিয়ে যাবে। আমি দিনক্ষণ বলতে চাই না, কারণ এটা গোপনীয়। এটাতে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত আছে। তবে শিগগিরই তাদের ফেরত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাখাইনের সিত্তের বাংলাদেশ উপদূতাবাসের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কূটনীতিকদের ইয়াঙ্গুনে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গত রবিবার তিনজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে কূটনীতিকসহ মোট ছয়জন ওই মিশনে কর্মরত। তাদের পরিবারের সদস্য আছেন চারজন। রাখাইনে বর্তমানে যুদ্ধের কারণে সড়ক পথ বন্ধ রয়েছে। ফলে যাতায়াতের জন্য আকাশপথই একমাত্র ভরসা। গতকাল মিশনের সবাই রাখাইন ছেড়েছেন। সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে স্থানীয় দু-একজন নাগরিক অবস্থান করবেন।

এরই মধ্যে ৩৩০ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা জান্তা সদস্যদের শুরুতে আকাশপথে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের জান্তা সরকার গভীর সমুদ্রপথে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ অবস্থায় কক্সবাজার নৌ জেটি দিয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে ঢাকা। দিনক্ষণ ঠিক হলে মিয়ানমার থেকে আসা জাহাজ ওই জেটিতে ভিড়বে। পরে ওই জাহাজে পাঠানো হবে জান্তা অনুগতদের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাদের একটি জাহাজ ইয়াঙ্গুন থেকে সিত্তে পাঠিয়েছে। পরে সিত্তে থেকে জাহাজটি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকতের কাছে পৌঁছাবে। সেখান থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। যদিও এ মুহূর্তে সিত্তে বন্দরসহ রাখাইনের আশাপাশ এলাকায় মিয়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে মোতায়েন রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমার নৌবাহিনী জাহাজ পাঠানোর প্রস্তুতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করে জাহাজটি প্রবেশের অনুমতি দেবে। আশা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই ফেরত যাবেন আশ্রিত জান্তা সদস্যরা।

বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটলেও গতকাল পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল।