হতাশ সিলেটের বাগান মালিকরা

সংকটে চা শিল্প

সিলেট ব্যুরো
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
হতাশ সিলেটের বাগান মালিকরা

দেশে চা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা ও হতাশা প্রকাশ করেছেন চা বাগান মালিকদের সংগঠন টি প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। চায়ের দেশ সিলেটের বাগান মালিকরা গতকাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের সংকটের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, বড় কোম্পানিগুলো কোনোরকমে বাগান পরিচালনা করলেও ছোট বাগানগুলো বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে সিলেট বিভাগের ২৫টি চা বাগানের মালিকদের পক্ষে মোহাম্মদ মুফতি হাসান বলেন, দেশের বাইরে থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে খুবই নিম্নমানের চা দেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া নিয়ম বিবর্জিত পদ্ধতিতে পঞ্চগড় এলাকায় নিম্নমানের চা উৎপাদন, আইন অমান্য করে পঞ্চগড় এলাকায় সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে চা বিক্রয় চা শিল্পের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

চা শিল্পের ওপর কয়েক লাখ শ্রমিক ও কর্মচারী জীবিকা নির্ভরশীল। পরোক্ষভাবে আরও কয়েক লাখ লোক চা শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে বহুমুখী সংকট ও অবহেলায় বর্তমানে চা শিল্প কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে।

শ্রমিক মজুরি, জ্বালানি তেল, রেশন, বাগানে ব্যবহৃত রোগবালাই দমনের ওষুধ, সার এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। অন্যদিকে বৃদ্ধির বদলে কমেছে চায়ের নিলাম মূল্য। ভালো মানের চা ২২০ টাকা ও তদূর্ধ্ব দামে বিক্রি হচ্ছিল, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। বর্তমানে নিলাম মূল্য ১৭০-১৭৫ টাকা থেকে নেমে ১০০-১১০ টাকায় এসেছে। এমনকি ১০০ টাকারও কম দামে নিলামে বিক্রি হচ্ছে। চায়ের এই নিলাম মূল্য দিয়ে উৎপাদন খরচ বহন করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ১৮৫৪ সালে সিলেটে মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সিলেট বিভাগে ১৩৫টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২, হবিগঞ্জে ২৪ ও সিলেটে ১৯টি চা বাগান রয়েছে। কিন্তু চোরাচালান, বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকঋণ পরিশোধের উচ্চহারসহ নানা সংকটে ঝুঁকছে সিলেটের চা শিল্প। এভাবে চলতে থাকলে পাট বা গার্মেন্টস শিল্পের মতো ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে চা শিল্প।

চা শিল্প রক্ষায় চায়ের কেজিপ্রতি চায়ের নিম্নতম মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ, ভালো মানের চা নিলামে বেশি দর, দেশের বাইরে থেকে চোরাই পথে চা আসা বন্ধ করা, পঞ্চগড় এলাকায় চা উৎপাদনের মান এবং আইন ও বিধিসম্মতভাবে চা বাজারজাত করার ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণের দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিভাগের ২৫টি চা বাগানের মালিক ও মালিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।