যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর পরামর্শ

ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলের মতো উন্নয়ন প্রকল্প হওয়ায় শহরের যানজট কিছুটা কমেছে। ঢাকায় যানজট কমাতে হলে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তার মতে, গাড়ি যত বাড়বে, তত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ঢাকার যানজট : মেট্রোরেল ও এক্সেপ্রেসওয়ের প্রভাব’

শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের বিটভিত্তিক সংগঠন ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, বিআইপি সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ ও নগর পরিকল্পনাবিদ আয়েশা সাঈদ। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ওবায়দুর মাসুমের সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মুভমেন্ট বেড়েছে। মানুষ এখন কাপড় কিনতে পারে, তরকারি কিনতে পারে। দূর-দূরান্ত থেকে বিরল জিনিস পাওয়ার সুযোগ পায়। আগে টাকা কম ছিল তাই হাঁটতেন বা সাইকেলে চলাফেরা করতেন অথবা ছোট্ট যানবাহনে যেতেন। এখন যেহেতু টাকা আছে তাই আপনি গাড়ি কিনছেন। গাড়ি যখন কিনবেন, তখন রাস্তা তো লাগবে। রাস্তাটা কোথায়?’ তিনি বলেন, কোনো ভবনে ২০টা পরিবার থাকলে সেখানে নিজস্ব গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। পরিবারপ্রতি একটি গাড়ি ব্যবস্থা করতে হবে এবং দ্বিতীয় গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। মার্কেট নির্মাণ করলে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো নেই বলে সবাই মিলে রাস্তায় গাড়ি রাখে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।

মন্ত্রী বলেন, নগরে রাস্তা থাকার কথা ২০ শতাংশ, আছে মাত্র ৭ শতাংশ। সেই ৭ শতাংশের ৩ শতাংশ চলে যায় অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিতভাবে অযৌক্তিক অপব্যবহারের কারণে। এগুলো দেখার কথা কার? ট্রাফিক পুলিশের। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, হাঁটার জায়গা বাড়ানো দরকার। এর ফলে মানুষ স্টেশন থেকে নেমে তার গন্তব্যে হেঁটে যেতে পারবে। এটির কোনো বিকল্প নেই। আর বাসের যাত্রীর চেয়ে মোটরসাইকেল যাত্রী বেড়েছে, কারণ মানসম্পন্ন বাস নেই। এ জন্য বাস রুট রেশনালাইজেশনহ বাস চলাচলে শৃঙ্খলা দরকার।

অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ের প্রভাব ইতিবাচক। তবে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হলে আরও বেশি মানুষ সুবিধা পেত। কিন্তু এই উদ্যোগকে অবশ্যই সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে রূপ দিতে হবে। দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে দ্রুত গাড়ি চলে যাচ্ছে, আর নিচে যানজট লেগে আছে। নিচের সড়কে শৃঙ্খলায় নজর দিতে হবে। বিমানবন্দরে ১০ মিনিটে চলে যাওয়া যাচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে নামার পথগুলোতে যানজট লেগে আছে। যদিও এটি শুরুর তুলনায় কমেছে।

কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, যানজট নিরসনে পাবলিক সার্ভিসকে গুরুত্ব দিতে হবে। শহরের রাস্তার যে কোনো একটা লেন পাবলিক বাসের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে। সেটা হতে পারে রাস্তার বাঁ পাশের লেন। যাতে যাত্রী ওঠানামায় সুবিধা হয়। অন্য লেনগুলো অন্য গাড়ির জন্য উন্মুক্ত থাকল। এই ক্ষেত্রে তিন লেনের সড়ক হলে সহজ হয়। লেন নির্ধারণ করার পর প্রাইভেট বা অন্যান্য গাড়ি ব্যবহারকারীরা যখন দেখবেন পাবলিক বাসকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তখন তারাও পাবলিক ট্রান্সপোর্টের দিকে ঝুঁকবেন। তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই মানসম্মত এবং নিরপাদ সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।

আয়েশা সাঈদ বলেন, ‘আমি যখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতাম আমাদের ক্লাসে প্রফেসর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং প্লানিং নিয়ে লেকচার দিতেন। তখন প্রায় সময়ই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাহরণ দিতেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কতটা উন্নয়ন হয়েছে সে বিষয়গুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরতেন। আমি তখন নিজেকে অনেক কৃতজ্ঞবোধ করতাম যে প্রধানমন্ত্রী শুধু আমাদের দেশকেই নয়, দেশের নাগরিকদেরও অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, সুখ-দুঃখ আর আনন্দ-বেদনা নিয়েই কাটানো আমাদের এই শহরের নাম ঢাকা। নানা সুখের মধ্যে অন্যতম দুঃখের প্রধান কারণ হচ্ছে যানজট।