এক যুগেও ধরা পড়েনি খুনিরা
তদন্তে সময় বেড়েছে ১০৫ বার, হতাশ স্বজনরা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক যুগ আজ রবিবার। থানা-গোয়েন্দা পুলিশের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনি গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই, ধরা পড়েনি কোনো আসামি। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেড়েছে ১০৫ বার। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী বলেছেন, হত্যার ঘটনায় সঠিকভাবে দোষী নির্ণয়ে তদন্তের জন্য প্রয়োজনে ৫০ বছর সময় দিতে হবে। ফলে সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনির পরিবার ও সহকর্মীদের জন্য আরও নিরাশা ও হতাশা বাড়ছে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। গত ২৩ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ১০৫ বারের মতো পিছিয়ে এই তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নিহতদের পরিবার ও সহকর্মীরা বলছেন, খুনের সময় ঘটনাস্থলে ছিল এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মিহির সারওয়ার মেঘ। তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর, এখন ১৭ বছরের তরুণ। বাসার ভেতর বাবা-মাকে কেন খুন হতে হলো, আজও সেই প্রশ্নের জবাব পায়নি মেঘ। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় নেওয়ার নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে কিনা, সেটাও প্রশ্ন। তাদের দাবি, র্যাব দ্রুত মামলাটির সমাধান করুক।
তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে রুনির ভাই নওশের আলম বলেন, মামলার তদন্ত সংস্থা আর তদন্ত কর্মকর্তা বদলাচ্ছে। এক তদন্ত কর্মকর্তা যান, আরেক তদন্ত কর্মকর্তা এসে সময় নেন। বারবার সময় নেওয়া যেন তদন্তের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু তারা যে কিছু করতে পারছে না, ব্যর্থতার দায়ও নিচ্ছে না। আমরা বিচার চাই। আমরা চাই হত্যাকারীরা শনাক্ত হোক, আইনের আওতায় আসুক, আমাদের এটাই চাওয়া।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আমাদের সময়কে বলেন, সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলা একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা। তদন্তভার পাওয়ার পর র্যাব সর্বোচ্চ অধিকার ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন বাহিনী, সংস্থা ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যাদির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে তথ্য বিশ্লেষণ করছি। দেশের গণ্ডিকে অতিক্রম করে বিভিন্ন উন্নত দেশের সহায়তা নিয়েছি। আমরা আমাদের চেষ্টা বা প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি রাখছি না।
তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, সাগর-রুনির বাসা থেকে জব্দ করা আলামতের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দুজন পুরুষের উপস্থিতি মিলেছে। অজ্ঞাতপরিচয়ে সেই দুই পুরুষকে শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসেস (আইএফএস) ল্যাবে ডিএনএ পাঠিয়েছিল র্যাব। ল্যাবের ফল পাওয়া গেলেও তা থেকে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
গত ১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সঠিকভাবে দায়ী নির্ণয় করতে তদন্তে যতদিন সময় লাগে, ততটুকু সময় দিতে হবে। সেটা যদি ৫০ বছর হয়, ৫০ বছর দিতে হবে। পরে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তার কথা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ৫০ বছর কথাটি তিনি আপেক্ষিকভাবে বলেছেন।
মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অপর আসামিরা হলেনÑ বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্রপাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। অন্য আসামিরা কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি দম্পতি। ঘটনার পরের দিন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়।