ফাইনালে টসের সময় কী হয়েছিল?

স্পোর্টস ডেস্ক
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১১
শেয়ার :
ফাইনালে টসের সময় কী হয়েছিল?

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে যৌথ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ-ভারত। শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ-ভারত।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। টাইব্রেকারেও ছিল নাটকীয়তা। টাইব্রেকার ১১-১১ গোলে খেলা অমীমাংসিত থাকে। তারপর শুরু হয় নাটক।

ফুটবলে সাধারণত টাইব্রেকার সাডেন ডেথ মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। কিন্তু এ ম্যাচের শ্রীলংকান কমিশনার ডি সিলভা জয়সুরিয়া দিলান শিরোপা নির্ধারণে টস করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই টসের ভাগ্য-পরীক্ষায় জিতেই ভারত শিরোপা জয়ের উৎসবটাও শুরু করে দেয়।

কিন্তু টসের পরে বাংলাদেশ দল প্রতিবাদ জানায়। খুব সম্ভবত, বাংলাদেশের যুক্তি ছিল টসটা দ্রুত হয়ে গেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদও চলতে থাকে। কিন্তু নাটক নতুন মোড় নেয় ম্যাচ কমিশনার নিজের ‘ভুল’শোধরাতে যাওয়ায়।

বাফুফের মিডিয়া বিভাগ জানিয়েছে, ম্যাচের রেফারি টস করে ভুল করেছিলেন। সেই ভুলটা শুধরে তিনি টাইব্রেকারের সাডেন ডেথ নতুন করে শুরু করতে চেয়েছেন। ভারত সেই সিদ্ধান্ত না মেনে মাঠ ছাড়ার পর আবার ফিরে আসে। তখন দুই দলকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

টাইব্রেকারে নির্ধারিত ৫টি করে পেনাল্টি শুটআউটে সমতা থাকলে সাডেন ডেথ চলার কথা। এই সময় দুই দলই একটি করে পেনাল্টি শট নিতে থাকে। যে দলের পেনাল্টি মিস হবে, হেরে যাবে সেই দলই। ফুটবল ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে, যেখানে সাডেন ডেথ দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ টাইব্রেকার ৫৪ শটের। সেটি বেশি দিন আগের কথা নয়। যদিও সেই খেলাটি আন্তর্জাতিক বা ওপরের সারির কোনো লিগের নয়। উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডে দশম স্তরের ফুটবলে ওয়াশিংটন ও বেডিংটনের মধ্যকার ম্যাচটি নিষ্পত্তি হয়েছিল ২৫-২৪ ব্যবধানে।

ওপরের সারির ফুটবলের রেকর্ডটা ২০০৫ সালের। নামিবিয়ান কাপে কেকে প্যালেস ও সিভিক্স নামের দুটি ক্লাবের খেলায় টাইব্রেকারের নিষ্পত্তি হয়েছিল ১৭-১৬ ব্যবধানে। সে হিসেবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ফাইনালের টাইব্রেকার ১১-১১ সমতায় থাকার পরও চলারই কথা। কিন্তু লঙ্কান ম্যাচ কমিশনারের যেন বেশ তাড়াই ছিল। তিনি হুট করেই টস-ভাগ্যে শিরোপা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।

পরে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কোচিং স্টাফরা ম্যাচ কমিশনারের কাছে শিরোপা নির্ধারণে টসের নিয়ম সাফে আছে কি না, সে সম্পর্কেই জানতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অনড়। তবে প্রতিবাদ জানানোর পরও বাংলাদেশের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার কেন টসে অংশ নিয়েছিলেন? এ নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

টসের পর ভারত জিতে যাওয়ার পরই কেন বাংলাদেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়ল? বাংলাদেশ দলের একজন কোচিং স্টাফ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা ওই সময় টসের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম। আমরা ম্যাচ কমিশনারের কাছে টসের নিয়মসংক্রান্ত আইনটা জানতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু এর মধ্যেই আফঈদাকে তিনি টসে ডেকে নেন। আফঈদা ভেবেছিল, টসটি বোধ হয় সাডেন ডেথ আবার শুরু করার জন্য হচ্ছে। পুরো ব্যাপারটিই ঘটে যায় খুব দ্রুত। ম্যাচ কমিশনার তাড়াহুড়া করছিলেন।’

স্বাভাবিকভাবেই টসে জিতে ভারতীয় দল শিরোপার জয়ের আনন্দে মেতেছিল। তাদের উৎসব-উচ্ছ্বাসের মধ্যেই ম্যাচ কমিশনার নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেটি শোধরাতে চেয়েছিলেন। ভারতের শিরোপা জয় ‘বাতিল’ করে আবারও সাডেন ডেথ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চমৎকার একটি ম্যাচ পরিণত হয়েছে বিতর্কিত এক ম্যাচে। গ্যালারি অশান্ত হয়েছে, আয়োজকেরা অপ্রস্তুত হয়েছে। অথচ এই ম্যাচটি ৯৩ মিনিটে সাগরিকার দুর্দান্ত এক সমতাসূচক গোলের জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারত।