লাফিয়ে বাড়ছে ছোলার দাম
পবিত্র রমজান মাসের ইফতার-পণ্যে ছোলা এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তাই রোজা এলেই ছোলার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর বাড়তি এ চাহিদাকে সামনে রেখে প্রতিবছরই এ সময়ে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়Ñ একই কায়দায়, একই যুক্তিতে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং এবার অনেকটা আগেভাগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ছোলার বাজার; লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। খুচরা পর্যায়ে এক কেজি ছোলা কিনতে এখন ১শ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। গত মাসের শুরুর দিকেও ৯০ টাকাতে কেনা গেছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটের বিউটি স্টোরের ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন জানান, সাধারণ মানের ছোলাই ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। আর একটু ভালো মানেরটা ১০৫ টাকা কেজি। মানভেদে ১১০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও।
জাকির বলেন, রোজা কাছে চলে আসায় ছোলার বাজার অনেকটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। পাইকারিতে বাড়তি দামে কেনা পড়ছে।
এ বাজারের ঢাকা জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মুজাহিদ বলেন, ছোলার বাজার এখন প্রতিদিনই বদলাচ্ছে। হুজুগে দাম চড়া হয়েছে। তাই রোজায় বিক্রির ছোলা এখনো সংগ্রহ করিনি। বাজার আগে স্থির হোক, তারপর কিনব।
মালিবাগ বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। একই চিত্র রামপুরা ও কদমতলী এলাকাতেও। তবে কোথাও কোথাও ভালো মানের অস্ট্রেলিয়ান ছোলার কেজি ১১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরের রুবেল হোসেন বলেন, ছোলার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু পাইকারিতে দাম এখনো বাড়তি। ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরেক বিক্রেতা ভুইয়া স্টোরের ব্যবসায়ী মো. শিপন বলেন, সাধারণ মানের ছোলার কেজিই ১০৫ টাকা। এগুলো কেনাই পড়েছে ৯৫-৯৬ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে সারা বছরে যে পরিমাণ ছোলা বিক্রি হয় তার অর্ধেকটাই হয় রমজান মাসে। বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে রোজার আগ মুহূর্তে আমদানিকারক ও মজুদদারদের কেউ কেউ দাম বাড়িয়ে দেয়। মৌলভীবাজারের একাধিক পাইকারি বিক্রেতা জানান, সম্প্রতি সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু আমদানিনির্ভর এ পণ্যটির বাজার কিছু বড় আমদানিকারক ও মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা দাম বাড়িয়ে দেন। আর বড় ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যরাও বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবছর এভাবেই বাড়ছে।
তবে ডাল আমদানিকারক ও সরবরাহকারীরা দাবি করছেন, বাজারে সরবরাহ বাড়লেও এবার ছোলার আমদানি কম। তা ছাড়া এবার ভালো মানের ছোলার সংকট রয়েছে। ফলে বাজার চড়া।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে ডালের দর বলতে গেলে স্থিতিশীল রয়েছে। রোজায় বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইথিওপিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা ছিল আমাদের। কিন্তু দেশে ডলারের বাড়তি দাম ও সংকটের কারণে এ মৌসুমে এলসি খোলা ব্যাহত হয়েছে এবং আমদানিও কম হয়েছে। এতে বাজারে দাম অনেকখানি চড়া। গতবার ব্যবসায়ীদের আমরা ৭০ টাকা কেজি দরে ছোলা দিতে পেরেছি। এবার সেটা ৯০-৯২ টাকা হয়েছে। তার ওপর এবার যে ছোলা এসেছে তার বড় অংশই নিম্নমানের। ফলে ভালো মানের ছোলার এখনো ঘাটতি রয়েছে। ভালো মানের ছোলার ঘাটতি থাকলে বাজার চড়া থাকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর হিসেবে দেখা যায়, গত বছরের এই সময়ে চেয়ে বর্তমানে ছোলার দাম ২০ শতাংশ বেশি। গত এক মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারির তুলনায় গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি পণ্যটির দাম সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি রয়েছে।
রোজায় তুলনামূলক কম দামের অ্যাংকর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। পেঁয়াজুসহ ইফতারের বিভিন্ন পদে এ ডালের ব্যবহার থাকে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে। গরিবের ডাল খ্যাত এই ডালের দামও বর্তমানে ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রমজান মাস সামনে রেখে আমদানি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলো এখন বাজারে ছাড়ছেন তারা। সরবরাহ বাড়লে দাম কমার কথা। সেখানে উল্টো এত হারে বেড়ে যাওয়াটা অযৌক্তিক তো বটেই, অস্বাভাবিকও।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতি রোজায় দাম বাড়ানো রীতিতে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের লোভ বাড়ছে। চাহিদা বাড়লে বিক্রি বাড়ে। অন্যান্য দেশে এ সময় দাম কমে। আর আমাদের এখানে বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চলে।
তিনি আরও বলেন, রোজার প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সহনীয় রাখার লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এগুলো ইতিবাচক। কিন্তু আমরা দেখি, সরকারের হিসেবে আমদানি সন্তোষজনক, আর ব্যবসায়ীরা বলেন কম হয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত হিসাবে ত্রুটি রয়েছে। আবার সরকার পণ্য আমদানিতে যে সব সুবিধা দিচ্ছে সেগুলো যাতে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায়, পণ্যের সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কেবল ব্যবসায়ীরা যাতে সেটা ভোগ না করে।