দর্শনার্থীর পাশাপাশি বাড়ছে বই বিক্রি

চপল মাহমুদ
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
দর্শনার্থীর পাশাপাশি বাড়ছে বই বিক্রি

বাঙালির প্রাণের মেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেলায় আসছে নতুন নতুন বই। পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রে প্রবীণ ও নবীন লেখকদের নতুন বই। গতকাল সোমবার পঞ্চম দিনে মেলা প্রাঙ্গণে পাঠক-লেখক-দর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল আগের দিনগুলোর মতোই। বলা যায় ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য অমর একুশে বইমেলা। নতুন বইয়ের গন্ধে বিমোহিত হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে বইপোকারা। লেখক-পাঠকের আড্ডায় স্টলে স্টলে ঘুরছেন তারা। খুঁজছেন তাদের পছন্দের বই। সংগ্রহ করছেন নতুন বইয়ের ক্যাটালগ। তবে পাঠকদের মধ্যে অনেকেই বলছেন বইয়ের দাম বেশি। প্রকাশকরা বলছেন কাগজ, কালিসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে।

গতকাল সন্ধ্যার দিকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়ে যায়। প্রায় সব স্টলেই কম-বেশি বাড়ছে বইয়ের বিক্রি। বিভিন্ন প্রকাশনীতে দায়িত্বরতরা বলছেন, শুরু হিসেবে বিক্রি খারাপ নয়। ভাষাচিত্রের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, মাত্র কয়েক দিন হলো মেলা শুরু হয়েছে। সে তুলনায় বইয়ের বিক্রি একেবারে মন্দ নয়। মানুষ আসছে, বই দেখছে, পছন্দ হলে দুই-একজন কিনেও নিচ্ছেন। প্রথম দিকে মেলায় যে পরিমাণ মানুষ আসছেন, তা আশাব্যঞ্জক।

এদিকে, মেলা প্রাঙ্গণে ধুলার বাড়াবাড়ি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মেলায় ঘুরতে আসা বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মান আহমেদ। তিনি বলেন, মেলায় এসে ধুলার কারণে অস্বস্তি লাগছে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরাই অস্বস্তিতে ভুগছি। শিশুদের কথা ভাবেন একবার।

একাধিক প্রকাশক জানান, বইমেলার শুরুটা ভালো হয়েছে। এ বছর বইমেলা আগের চরিত্রে ফিরে আসছে। আশা করি, এবারের মেলা জমে উঠবে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই। প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বই। পাঠকসমাগমও বেশ ভালো। প্রতিদিনই একটু একটু করে বইয়ের বিক্রি বাড়ছে।

নতুন বই : এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৭০টি। এর মধ্যে গল্প ৮, উপন্যাস ৬, প্রবন্ধ ১, কবিতা ৩৬, গবেষণা ৩, ছড়া ১, শিশুসাহিত্য ১, জীবনী ৩, মুক্তিযুদ্ধ ২, ভ্রমণ ১, ইতিহাস ২, বঙ্গবন্ধু ১ এবং অন্যান্য ৫টি।

মূলমঞ্চের আয়োজন : গতকাল বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদ রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইসরাইল খান এবং তপন বাগচী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাইফুল আলম।

প্রাবন্ধিক বলেন, মানোত্তীর্ণ সাহিত্য সৃষ্টির সমূহ প্রতিভা ছিল মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরীর। মাত্র ষাট বছরের জীবনে তার যে সাধনা ও কীর্তি, তা তাকে বাঙালির নবজাগরণের ইতিহাসে স্মরণীয় জনের আসন দিয়েছে। একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক-সম্পাদক, সংগঠক ও রাজনীতিক হিসেবে তিনি বরেণ্য। তার জীবনবৃত্তের পুরো তথ্য চয়ন ও বিশ্লেষণ করলে শুধু মুসলিম সম্প্রদায় বা পূর্ববাংলার নয়, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে তাকে একজন যথার্থ রেনেসাঁ-অনুধ্যায়ী পুরুষ ও প্রকৃত বুদ্ধিজীবী হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব।

আলোচকবৃন্দ বলেন, মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরীর বড়ো পরিচয় হলো সাময়িকপত্র সম্পাদনা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার অধিকারী। তৎকালীন সময়ে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

লেখক বলছি : লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি নাসির আহমেদ, কবি ইসলাম রফিক, শিশুসাহিত্যিক চন্দনকৃষ্ণ পাল এবং লোকসাহিত্য গবেষক সৈয়দা আঁখি হক।

সাংস্কৃতিক আয়োজন : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, সরকার মাসুদ এবং মাসুদ পথিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, সাফিয়া খন্দকার রেখা এবং শামস্ মিঠু। দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করেন ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর শিল্পীবৃন্দ। এ ছাড়া ছিল কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘নৃত্যালোক’ এবং জুয়েল কুমার সরকারের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘নৃত্য নিকেতন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ইয়াসমীন মুশতারী, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, লীনা তাপসী খান ও সায়ন্ত মিশকাত জামি।

আজকের আয়োজন : আজ ষষ্ঠ দিনে মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জফির সেতু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শাহিদা খাতুন এবং সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আবদুল খালেক।