সমালোচনা করতে হবে সরকারকে মেনেই
দেশি-বিদেশি মহল বিশেষ যে প্রতিক্রিয়াই দেখাক না কেন, নতুন সরকারকে মেনেই তাদের সমালোচনা-আলোচনা করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ বাসভবনে দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম মনে করেন, বিরোধী দল কী নিয়মে বিরোধিতা করবে, তা চূড়ান্ত করা অত্যন্ত বড় কাজ। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় সংসদে তার দল গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের কথা বলবে। তবে দেশে এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সংকট হলোÑ ডলার।
আর সবাই মিলে চেষ্টা করলে দেশের দুর্নীতি কমবে বলেও মনে করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়। গত ৭ জানুয়ারির ভোটে প্রথমবারের মতো সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম কক্সবাজার-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১০ জানুয়ারি শপথ এবং গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দেন ইবরাহিম এমপি। প্রথম দিনের অনুভূতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ রাজনীতিক আঙ্গিকে আমার জন্য নতুন জীবন। এখানে প্রতিটি পদক্ষেপেই শেখার আছে, ভুল-ভ্রান্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা আছে, সামনে আরও থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হলোÑ কোন নিয়মে এ সংসদে মানুষের মনের কথা বলতে পারব, কী কথা বলব, কখন বলব এবং তা নিয়ে অব্যাহতভাবে চিন্তা করতে হয়।’
জাতীয় সংসদের বিরোধী আসনে বসা সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘আমি বিরোধী দলের আসনে বসেছি। আমাদের দায়িত্ব হবে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা, সরকারকে পরামর্শ দেওয়া এবং সরকারের নীতিগুলো বিশ্লেষণ করা’
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য জাতীয় পার্টিকে দলীয় সমর্থনও জানিয়েছে কল্যাণ পার্টি। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমরা তো বিরোধী শিবিরের আসনে আছি। আর একজন মাত্র সংসদ সদস্য। ভগ্নাংশের হিসাবে সংরক্ষিত আসনের যে সমর্থন রয়েছে, তা জাতীয় পার্টিকে জানিয়েছি।’
বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঢালাও মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি নিজেকে এখনো ওই মাত্রার দক্ষ ও অভিজ্ঞ মনে করি না। আমি মনে করি, যে কোনো একটা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ থাকা অতিআবশ্যক। সঙ্গে এটাও মনে করি, বিরোধী দল কী নিয়মে বিরোধিতা করবেন, এটি স্থির করাটাও বড় একটা কাজ।’
গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিনে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়া ইস্যুতেও কথা হয়। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না। সরকার মন্তব্য করতে পারে। আমাকে মন্তব্য করতে হলে শোনা কথার ওপর করতে হবে অথবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করতে হবে এবং আমি সেটি করতে চাই না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘দুটি বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি; তার প্রভাব তো পড়বেই। সেই প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক বিশ^ কেউ এদিকে মন্তব্য দেবে, কেউ ওদিকে মন্তব্য দেবে। এই মন্তব্য দেওয়ার স্বাধীনতা তাদের আছে। এটা আমরা কেউ বন্ধ করতে পারব না। দেশ থাকবে, সরকার থাকবে, সরকারের কার্যক্রম পরিচালিত হবে- এটা কেউ বাধা দেওয়ার বা বন্ধ করার কোনো কায়দা দুনিয়াতে নেই। এই সরকারকে মেনে নিয়েই আমাদের সমালোচনা-আলোচনা করতে হবে।’
সরকারবিরোধী আন্দোলন ছেড়ে ভোটে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমি চিন্তা করে দেখলাম, পার্লামেন্টে গিয়ে দেখি মানুষের কথা বলা যায় কিনা। আমার পক্ষ থেকে অবদান রাখার সুযোগ গ্রহণ করতে চাই। এই সুযোগটা রাজপথ থেকে পাওয়া এক জিনিস, পার্লামেন্টের ফ্লোরে পাওয়া আরেক জিনিস। সেখানে গণতন্ত্রের কথা বলব, মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলব, মানুষের কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টার কথা বলব।’
দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে ডলার। এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটলে বাকি সব সংকট কমে আসবে।’ দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে; আমাকেও কষ্ট দিচ্ছে। এটা সমাধানের জন্য সরকারি-বেসরকারি এবং নাগরিকদের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিশেষ করে রমজান মাস আসছে, এখনই যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।’
দুর্নীতি প্রসঙ্গে এই সংসদ সদস্যের বক্তব্য হলোÑ ‘আমি নিজে দুর্নীতি করি না; দুর্নীতির কথা শুনলে কষ্ট লাগে। এই দুর্নীতি কমানোর জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে দুর্নীতি কমবে, তবে একদিনে কমবে না।’
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন