দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু

যাত্রা শুরু হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদের। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদপূর্তির পরদিনই দ্বাদশ সংসদ শুরু হলো। অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ আগে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঘিয়ে রঙের জমিনে বেগুনি আঁচল ও পাড়ের জামদানি শাড়ি পরে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সিটে বসার আগে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে জড়ো হন সংসদ সদস্যরা। তারা সবাই সংসদনেতাকে সালাম দেন। কয়েকজন এমপিকে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়া শাহজাহান ওমরকে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়। পরে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তারপর তিনিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন।

৩টার দিকে বিদায়ী (একাদশ) সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে এমপিরা নিজ নিজ আসনের দিকে চলে যান। এ সময় সবাইকে নিজ নিজ আসনে গিয়ে বসার জন্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে তাগাদা দিতে দেখা যায়। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচন করা হয়। স্পিকার পদে শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। আর কোনো প্রার্থী না থাকায় শিরীন শারমিন চৌধুরী সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা দেন স্পিকারের আসনে থাকা শামসুল হক। এরপর অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। এ সময় সংসদ ভবনে স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।

পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আবার অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে সংসদে বক্তব্য দেন সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দীপু মনি এবং বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের। পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচন হয়। শামসুল হক এবারও এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারি দলের সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলাম ডেপুটি স্পিকার পদে তার নাম প্রস্তাব করেন। সরকারি দলের মকবুল হোসেন তা সমর্থন করেন। অন্য কোনো মনোনীত প্রার্থী না থাকায় স্পিকার কণ্ঠভোটের মাধ্যমে ডেপুটি স্পিকারকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের জন্য ৫ সদস্যদের সভাপতিম-লী মনোনয়ন করা হয়। তারা হলেন- এবি তাজুল ইসলাম, শাহাবউদ্দিন, আ ফ ম রুহুল হক, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ ও উম্মে কুলসুম। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে নামের অগ্রবর্তিতা অনুসারে সভাপতিম-লীর সদস্যরা সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি পেশ করেন। কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহ, সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীসহ বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

পরে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। তার ভাষণের পর সংসদের অধিবেশন আগামী রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। প্রধান বিচারপতি, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দেশের বিশিষ্টজন ও ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সংসদে উপস্থিত হয়ে অধিবেশনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।

সংসদের প্রথম সারিতে বসলেন যারা

সরকারি বেঞ্চের (স্পিকারের ডান পার্শ্বে) প্রথম আসনে বরাবরের মতো সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসেছেন। এর পরের আসনটি ফাঁকা রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ওবায়দুল কাদের ও তোফায়েল আহমেদ বসেন। মাঝের (স্পিকারের মুখোমুখি) অংশের প্রথম সারির বাম দিকের (স্পিকারের দিকে মুখ করে) প্রথম আসনে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বসেছেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এবং শেষ আসনে বসছেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।

বিরোধীদলীয় বেঞ্চের (স্পিকারের বাম দিকে) প্রথম আসনে বসেছেন বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তার বাঁয়ে বসছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরপর পর্যায়ক্রমে বসেছেন জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, স্বতন্ত্র হুসামউদ্দিন, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হওয়া ২৯৯টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন। স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ আসনে ভোট হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের পর ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। সরকার গঠিত হয় পরদিন ১১ জানুয়ারি।