রাজউকের শতাধিক প্লট নিয়ে জটিলতায় গ্রাহকরা
টাকা দিয়ে প্লট কিনে হতাশায় ভুগছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইফতেখারুল হামিদ। তিনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে তিন কাঠার একটি প্লট পেয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল পূর্বাচলের ওই প্লটে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানাবেন তিনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। কাঠাপ্রতি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে নিজের প্লটটি বুঝে পাওয়ার আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু দেড় যুগ পরে এসে দেখলেন তার সেই প্লট অন্যজনের কাছে হস্তান্তর করে ফেলেছে রাজউক।
প্রবাসী ইফতেখারুল হামিদ এখন রাজউকের টেবিলে টেবিলে ঘুরছেন প্লট বুঝে পেতে। গতকাল সোমবার রাজউক ভবনে দেখা হয় ইফতেখারুল হামিদের সঙ্গে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি সবগুলো কিস্তি পরিশোধ করেছি। কয়েকদিন ধরে রাজউকে এসে ঘুরছি। তারা প্লট বুঝিয়ে দিতে পারছে না। রাজউকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কারও একটি প্লট বাতিল হলে সেই প্লটটি আমাকে দেবেন। কিন্তু কবে কার প্লট বাতিল হবে, সেই প্লট আমাকে কবে দেওয়া হবে জানি না।’
রাজউকের প্লট নিয়ে এ ধরনের জটিলতায় ভুগছেন শতাধিক গ্রাহক। আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রল্পের ২৪ নম্বর সেক্টরে ১১৬ নম্বর সড়কের তিন কাঠার একটি প্লটের আইডি দেওয়া হয় ইফতেখারুল হামিদকে। তিনি প্রবাসী হওয়ায় রাজউকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেননি। আর এই সুযোগে রাজউক কর্মকর্তারা অন্য একজনকে প্লটটি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
একই জটিলতায় রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। তাকে ২৪ নম্বর সেক্টরের একটি প্লটের আইডি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে তার সেই তিন কাঠার প্লট অন্য একজনকে হস্তান্তর করে রাজউক।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, রাজউকের প্রায় প্রতিটি বোর্ডসভায় এ ধরনের একটি করে প্লট জটিলতার ফাইল উঠছে। রাজউক এখন কারও নামে দ্বৈত প্লট
থাকলে একটি বাতিল করে এসব গ্রহীতাকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে অনেকেই কাক্সিক্ষত জায়গায় প্লট পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, রাজউকের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে অনেক প্লটের আইডি বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করেন। এতে গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ে বিকল্প পথ খোঁজেন। তখন ওইসব কর্মকর্তা ‘বিশেষ সুবিধা’ গ্রহণ করে থাকেন। তবে নিজেদের প্লটটি বুঝে পেতে ‘বিশেষ সুবিধা’ দিলেও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না। কারণ যেসব গ্রাহক মুখ খুলবেন, তাদের প্লট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর আইডি পাননি এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটা রাজউকের কিছু করার নেই। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় একজনের আইডি আরেকজন পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে কারও আইডি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু প্লট বরাদ্দ পেয়ে প্লট পায়নি এমন ঘটনা জানা নেই। এটুকু বলতে পারি, যারাই চূড়ান্ত বরাদ্দ পেয়েছেন, তারা প্লট পাবেনই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, যখন আইডি পরিবর্তন করা হয়, তখন গ্রাহককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই দেশে না থাকায় বা তাদের ঠিকানা সঠিক না থাকার কারণে চিঠি পাননি। কেউ প্লট না পেয়ে থাকলে পরবর্তী সময়ে খালি থাকাসাপেক্ষে প্লট পাবেন। বরাদ্দ পেয়েছেন, প্লট পাবেন না, সেটা কখনই হবে না। এ জন্য হয়তো অনেক সময় লাগতে পারে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রায়ই বোর্ডসভায় দু-একটি ফাইল ওঠে। সমস্যা হয়েছে যখন আইডি পরিবর্তন করে অন্য আইডিতে দেওয়া হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে ওই আইডিতে আগে থেকেই আর একজনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে পরিচয় গোপন করে স্বামী-স্ত্রীর নামে প্লট নিয়েছেন। যেহেতু রাজউকের প্লট বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী পরিবারের একজন একটি প্লট পাবেন। সে ক্ষেত্রে যে পরিবারে একাধিক প্লট রয়েছে, সে ক্ষেত্রে একটি বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক তার দুই প্লটের যে কোনো একটি রেখে অন্যটি বাতিল করতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের উদ্দেশ্য ঢাকা মহানগরীর অদূরে পূর্বাচল এলাকায় একটি আধুনিক উপশহর গড়ে তোলা। এর জন্য রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জ থানা এলাকার ৬ হাজার ১৫০ একর জমিজুড়ে এই প্রকল্প করা হয়। এখানে ২৬ হাজার আবাসিক ভবনের জন্য প্লট করে রাজউক। এই ২৬ হাজর প্লটে প্রায় ৬২ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে রাজউকের।