বগুড়ায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য, কুষ্টিয়ায় অভিযান

অস্থির চালের বাজার

আমাদের সময় ডেস্ক
২৫ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বগুড়ায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য, কুষ্টিয়ায় অভিযান

বগুড়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে লাগামহীনভাবে চালের দাম বেড়েছে। প্রশাসন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও তা মানা হচ্ছে না। খুচরা দোকানগুলোতে রকমভেদে প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে বস্তাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে দেশের চালের বাজারের অন্যতম মোকাম কুষ্টিয়ায় দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। অতিরিক্ত দামে চাল বিক্রি ও ওজনে কম দেওয়ায় দুজন খুচরা ব্যবসায়ী এবং দুই অটো রাইস মিলের মালিককে ১ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বগুড়া প্রতিনিধি শাহ্ মো. ইলিয়াস লেলিন জানান, বগুড়ায় গত এক সপ্তাহে খুচরা দোকানগুলোতে রকমভেদে ৮ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে। দামের লাগাম টানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রশাসন বাধ্য হয়ে বগুড়ায় মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে খুচরা বাজারগুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জেলার কলেজ বাজার, কলোনি বাজার, খান্দার বাজার, মাটিডালী বাজার, বৌবাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রশাসনের নির্দেশনা মানা হয়নি। উল্টো আগের দিনের চেয়ে গতকাল বুধবার ২৫ কেজির বস্তায় চালের রকমভেদে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে মিনিকেট চাল মিলগেটে ৬২ টাকা, পাইকারি ৬৩ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৬৪-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া আছে। আটাশ (মাঝারি) মিলগেটে ৫২, পাইকারি ৫৩ ও খুচরা দোকানে ৫৪-৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে। স্বর্ণা-৫ মিলগেটে ৪৬, পাইকারি ৪৭ ও খুচরা বাজারে ৪৮-৪৯ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে। চিনিগুঁড়া (খোলা) খুচরা পর্যায়ে পর্যায়ে ১১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বগুড়া জেলা অটো রাইস মিল মালিক সমিতির মুখপাত্র কিবরিয়া রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী কিবরিয়া বাহার আমাদের সময়ের কাছে দাবি করেন, বর্তমান চালের যে দর তা জয়পুরহাট, নওগাঁ আর দিনাজপুরের চেয়ে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা কম রয়েছে। তারপরও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অনেকটা নিরুপায় হয়ে তারা প্রশাসনের নির্ধারিত মূল্যে চাল বিক্রির চেষ্টা করবে। কিন্তু খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের নয়।

অপরদিকে চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য অটোরাইস মিলারদের দুষছেন হাসকিং তথা সেমি অটো মিলাররা। তাদের বক্তব্য, কোটি কোটি টাকার মেশিন বসিয়ে নিম্নমানের চালকে বেশি দামে গ্রাহক পর্যায়ে দিচ্ছেন অটো মিলের মালিকরা। এ বিষয়ে দেশের অন্যতম চালের পাইকারি মোকাম শেরপুরে সেমি অটো রাইস মিল হাসকিং মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবু তালেব আকন্দ জানান, অটোরাইস মিলের কথায় প্রশাসন যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা কেজিপ্রতি আরও ২-৩ টাকা কমে বিক্রি করতে পারব। কিন্তু তারা বড় ব্যবসায়ী হওয়ায় আমরা বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছি না।

কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কুষ্টিয়ায় ওজনে জালিয়াতি ও বেশি দামে খাদ্যদ্রব্য বিক্রির অভিযোগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে দুই খুচরা ব্যবসায়ী ও দুই অটোরাইস মিল মালিককে ১ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক সুচন্দন ম-লের নেতৃত্বে একটি টিম ইবি থানার হরিনারায়ণপুর বাজারে অভিযান চালায়। তারা সেখানে মেসার্স সাহা স্টোর ও মণ্ডল ব্রাদার্সের দোকানে লতা চাল ৬৮ টাকা দরে ও ভোজ্যতেল ১৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেসার্স সাহা স্টোরকে ২০ হাজার টাকা ও ম-ল ব্রাদার্সকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এর আগের দিন মঙ্গলবার দেশের অন্যতম বৃহত্তম সরু চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের বেশ কয়েকটি চালকলে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ওজনে কম দেওয়া ও বেশি দামে চাল বিক্রির অভিযোগে দেশ অ্যাগ্রোর মালিক আব্দুল খালেককে ২৫ হাজার ও গোল্ডেন রাইস মিল মালিক আনিসুজ্জামানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. এহেতেশাম রেজার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি চালকলে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে পুলিশ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।