দেশে প্রথমবার হার্টের রিং পরাল রোবট
ভারতে পাঁচ লাখ রুপি দেশে মিলবে ২০ হাজারে
দেশে প্রথমবারের মতো সফলভাবে রোবটের মাধ্যমে রোগীর হার্টে রিং সংযোজন করা হয়েছে। গত রবিবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সৌদি প্রবাসী মোরশেদ আলমের হার্টে এ রিং পরানো হয়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি বলা হয়ে থাকে। ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি টিম সফল অস্ত্রোপচার করেন। এর আগে দেশে প্রথমবারের মতো টিএভিআর পদ্ধতিতে বুক না কেটে হার্টের ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেন এ চিকিৎসক। মাত্র ২০ হাজার টাকায় দেশেই এই চিকিৎসাসেবা মিলবে, যেখানে ভারতে লাগে ৫ লাখ রুপি।
গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোবটের মাধ্যমে রিং নেওয়া মোরশেদ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মোরশেদ জানান, রোবটের মাধ্যমে রিং পরানোর পদ্ধতি অনেক ভালো লেগেছে। দ্রুত করায় বুঝতেই পারিনি। আমাদের মতো দেশে যে এত আধুনিক চিকিৎসা আছে বুঝতেই পারিনি। শুধু মোরশেদ নয়, আরও এক রোগীর দেহে একই মাধ্যমে রিং পরানো হয়। তিনিও সুস্থ রয়েছেন। আগামী ২৭ দিনে আরও আটজন রোগীকে এই পদ্ধতিতে রিং পরানো হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমান পৃথিবীতে হার্টের রিং পরানোর সর্বাধুনিক এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি। এতে দূরে থেকে নিখুঁতভাবে রোগীর হার্টের ধমনিতে রিং পরানো যায়।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চিকিৎসক প্রদীপ কুমার বলেন, রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টির প্রথম সুবিধা হলো- হার্টের রিং পরানোর জটিল প্রক্রিয়াটি রোবটের মাধ্যমে খুব সুক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে করা যায়। অনেক সময় হার্টের রিং নিখুঁতভাবে পজিশন করার জন্য এক মিলিমিটার সামনে অথবা পেছনে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাত দিয়ে করলে কঠিন হয়। আরেকটি সুবিধা হলো- চিকিৎসকদের যেখানে দেড় ঘণ্টা লাগে, সেখানে রোবটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগছে। এ ছাড়া হার্টের ভেতরে ক্যাথেটার, তার, বেলুন, রিং যত কম সময় রাখা যায় রোগীর জন্য তত নিরাপদ। তিনি বলেন, যেসব চিকিৎসক অনেক এনজিওপ্লাস্টি করেন, একটা সময় পর রেডিয়েশনের কারণে অনেক চিকিৎসক ব্রেন ক্যানসার ও চোখে ক্যাটারাক্টসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকিতে পড়েন এবং রেডিয়েশন প্রটেকশনের ১২ থেকে ১৫ পাউন্ড ওজনের একটি বিশেষ জামা দীর্ঘক্ষণ যাবত পরতে হয়। এতে ঘাড়ে নার্ভের চাপ পড়ে এবং পরবর্তীতে চিকিৎসক খুব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘাড় ও হাতে ব্যথার কারণে এনজিওপ্লাস্টি করতে পারেন না। বর্তমানে অনেক সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট এ সমস্যার জন্য চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রেডিয়েশন ছাড়াই এবং ভারী বিশেষ জামা পরা ছাড়াই ক্যাথল্যাবের কন্ট্রোলরুমে, তার অফিসে, সুযোগ-সুবিধা থাকলে বাসায় বসে অথবা দেশের বাইরে থেকেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে হার্টের রিং পরাতে পারবেন।
বিদেশমুখী রোগীর চাপ কমবে জানিয়ে এই চিকিৎসক আরও বলেন, এ অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি চালু হলে রোগীকে আর দেশের বাইরে যেতে হবে না। মাত্র ২০ হাজার টাকায় দেশেই এই চিকিৎসাসেবা মিলবে, যেখানে ভারতে লাগে ৫ লাখ রুপি।
জানা গেছে, চীনের মাইক্রো পোর্ট কোম্পানির তৈরি এই রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি যন্ত্রটি এক মাসের জন্য ফ্রান্স থেকে আনা হয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামোর সঙ্গে সহায়ক কিনা তা পরীক্ষা করার জন্যই মূলত এটি আনা হয়। অবকাঠামোর সহায়ক হলে সরকারের কাছে ক্রয়ের প্রস্তাব দেবেন সংশ্লিষ্টরা।
ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন বলেন, উন্নত বিশে^র ন্যায় রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রিং পরানো নিঃসন্দেহে রোগীদের জন্য সুখবর এবং আমাদের জন্য গর্বের। এর ফলে দূর থেকে বসেও রিং পরানো যাবে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমবে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন