নৌখাতের সাফল্যে নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ

তাওহীদুল ইসলাম
২৩ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
নৌখাতের সাফল্যে নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ


নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পুনরায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। স্বচ্ছ ইমেজের এই রাজনীতিবিদ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের পর থেকে নৌখাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং পুনরায় একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। গতকাল দৈনিক আমাদের সময়কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন সরকার, মন্ত্রণালয় এবং দেশের সমৃদ্ধির নানা প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের সময়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তাওহীদুল ইসলাম

দেশে নৌখাতের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বহু সংস্থা ও সংগঠন। অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। শুরুতে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ বারের

মতো দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বাধীন প্রতিটি সরকারই সফল। এজন্য আওয়ামী লীগকে পুনর্নির্বাচিত করেছেন দেশবাসী। এই সাফল্যের অংশ হতে পেরেছে নৌখাতও। খেয়াল করলে দেখবেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই মন্ত্রণালয়ে তেমন কোনো নজর ছিল না। যা হয়েছে, শুধু রুটিনওয়ার্ক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নতুনভাবে নৌমন্ত্রণালয়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ইতোমধ্যে একটি উচ্চতায় চলে গেছে মন্ত্রণালয়টি। বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য ও বাজেট এবং বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতাও।

সামনের দিনগুলোতে নতুন কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়Ñ এ প্রসঙ্গে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী যে ইশতেহারের কথা বলেছেন-‘উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।’ সেজন্য আমরা (নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়) কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ নজর দেব। বিশেষ করে তরুণদের জন্য। ইতোমধ্যে কিছু প্রকল্প নিয়েছি। সামনে আরও প্রকল্প পাইপলাইনে আছে। সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। এর অংশ হিসেবে দক্ষ জনবল তৈরির কাজ করছে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট। বছরে ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরির ব্যবস্থা করছে এ প্রতিষ্ঠান। ভূমিকা রাখছে মেরিন একাডেমিগুলোও। দুজন নারী ইতোমধ্যে বিদেশি জাহাজে নাবিক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এটা মাইলফলক। নারী ক্যাডেটরা ভালো ভূমিকা রাখছেন সাহসিকতার সঙ্গে। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ মন্ত্রণালয় বড় ভূমিকা রাখছে।

নদীবন্দর ও জাহাজ চলাচলের বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা হয়। ইতোমধ্যে ২৫টি নদীবন্দর আধুনিক ও সংস্কার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নতুন ১৮টি নদীবন্দর ঘোষণা ও স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো আপগ্রেড করতে পারলে অর্থনীতিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩০টি পতাকাবাহী জাহাজ ছিল। এর সংখ্যা ৬১টি ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এ সংক্রান্ত নীতিমালার কিছু পরিবর্তন এনেছি। আশা করছি আগামী ২-৩ বছরে পতাকাবাহী জাহাজ দুইশ থেকে তিনশতে গিয়ে উঠবে। অনেকে নিবন্ধন করাতে চায় বিদেশি জাহাজ। আজকেও আবুধাবি থেকে ৩০টি জাহাজ নিবন্ধনের প্রস্তাব এসেছে। এ ধরনের প্রস্তাব কিন্তু আসলে বিনিয়োগ। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়া মানে বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি। এটি দেশরতœ শেখ হাসিনার সফল দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সম্ভব হয়েছে। এর মূলশক্তি তিনি ও দেশের মানুষের সমর্থন। বিদেশিদের কছে তৈরি হয়েছে আকর্ষণ। এটি ধরে রাখতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছবে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তার মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের কথা বলেছেন। সেটাও আমরা সম্পন্ন করতে চাই। বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে নদী নালা খাল বিলের উন্নয়ন করব। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নতুনভাবে ড্রেজার সংগ্রহ কার্যক্রম হাতে নেয়। বিআইডব্লিউটিএ ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে ড্রেজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নদীকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মতে, নদীকে বাঁচাতে হবেÑ নদী না বাঁচলে বাংলাদেশকে বাঁচানো যাবে না। 

বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি তার মন্ত্রণালয়ের বড় সাফল্য উল্লেখ করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে পোর্ট ছিল একটি; চট্টগ্রাম বন্দর। সেটির সক্ষমতাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটালাইজড ও অটোমেশন করা হয়েছে। ধুঁকে ধুঁকে চলছিল মোংলা বন্দর। এটির আধুনিকায়ন হয়েছে। ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখন জেটিতে ভিড়তে পারে। পিপিপি মডেলে জেটি নির্মাণের কাজ চলমান। রেলপথ ও সড়কপথ তৈরি হচ্ছে মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হতে। পাশাপাশি নতুন একটি পোর্টÑ যেটিকে বাংলাদেশের পোর্ট তথা শেখ হাসিনার পোর্ট বলা হয়Ñ সেই পায়রা বন্দরের ফার্স্ট টার্মিনাল কার্যক্রম শেষের পথে। বাণিজ্যিক জাহাজ অপারেশন শুরু করেছে। পায়রাকে ঘিরে অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়েছে। পোর্ট যে একটি জনগোষ্ঠীকে বদলে দিতে পারে তার বড় দৃষ্টান্ত পায়রা বন্দর।

খালিদ মাহমুদ বলেন, সমুদ্র পরিবহনে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকার ওপর নির্ভরশীল ছিলাম আমরা। ফিডার ভেসেল দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করা হতো। নিজেরা সক্ষমতা অর্জন করছি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এই যে নৌপরিবহন ও মেরিটাইম খাতে বড় সক্ষমতা অর্জন করেছি, সেটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে। তারই দৃষ্টান্ত আইএমও নির্বাচনে আমরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এতে করে বিশ^দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে রাষ্ট্র। বিশ^মানের শিফিং ইয়ার্ড তৈরি হয়েছে। বেসরকারি ইয়ার্ড থেকে বরফ কেটে চলাচল করবে এমন জাহাজ তৈরি হচ্ছে। বিশেষায়িত ড্রেজার, যুদ্ধজাহাজ তৈরির সক্ষমতা বড় ব্যাপার। কাজেই বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যরকম উচ্চতায় চলে যাচ্ছে।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিপব্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে হংকং কনভেনশন স্বাক্ষর করেছি। ১০টি গ্রিন ইয়ার্ড তৈরির টার্গেট। আগামী এক বছরের মধ্যে সেই জায়গায় আমরা পৌঁছাব। তা ছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সক্ষমতা বেড়েছে। লোকসানি খাত লাভে পরিণত হয়েছে। আড়াইশ কোটি টাকার ওপর গেল বছরের মুনাফা অর্জন। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরে ৫০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। শিপিং করপোরেশনে নতুন জাহাজ যুক্ত হচ্ছে। ভূরাজনীতি ও বিশ^ পরিস্থিতিতে এটির প্রয়োজন ছিল। এটি প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী দৃষ্টির ফসল।

নৌমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রসঙ্গে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে শেখ হাসিনা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ তৈরি করেন। সেবা বৃদ্ধিতে আপগ্রেড করছি প্রতিনিয়ত। বেনাপোল অটোমেশন হয়ে গেছে। ভোমরা, বোলাগঞ্জ আপগ্রেড চলছে। খাগড়াছড়ির রামগঞ্জ, আখাউড়ায় কার্যক্রম চলছে। কয়েকটি স্থলবন্দর চলে বেসরকারি অপারেটরের মাধ্যমে। তিনি বলেন, কেবল ব্যবসাবাণিজ্য নয়, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। এতে স্থলবন্দরও ভূমিকা রাখছে। এগুলো আরও বেশি সহজ করতে চেষ্টা অব্যাহত আছে। অনঅ্যারাইভাল ভিসা চালু নিয়ে আলোচনা হচ্ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে সব কিছুকে উন্নত মানে নিয়ে আসা হবে।