মাদকের আখড়ায় এখন হরেক ফুলের হাসি

শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী উৎসব

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম
২২ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
মাদকের আখড়ায় এখন হরেক ফুলের হাসি

মাদকসেবীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-পতেঙ্গা সংযোগ সড়ক লাগোয়া জায়গাটি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতেন নগরবাসী, যা এখন ডিসি পার্ক নামে পরিচিত। এখানে এলেই গা শিউরে উঠত, এই বুঝি মাদকসেবী জাপটে ধরল! সেই একই জায়গায় এখন প্রতিদিন নানা বয়সের মানুষের ভিড়। তারা ছবি তুলছেন, ঘুরছেন, আড্ডা দিচ্ছেন; আর নিচ্ছেন নানা রঙের ফুলের নির্মল সুবাস। আগামী বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বারের মতো এখানে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। ফৌজদারহাট এলাকায় সাগর উপকূলঘেঁষে গড়ে ওঠা ফুলের রাজ্য ডিসি পার্কের চিত্র এটি।

চট্টগ্রামের ডিসির উদ্যোগে দুবাইয়ের মিরাকেল গার্ডেনের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক’। গত বছরের শুরুতে রঙ-বেরঙের ফুলের সম্ভার নিয়ে ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন পার্কটি গড়ে তোলে জেলা প্রশাসন। চোখ জুড়ানো বর্ণিল এই ফুলের সমারোহ দেখে উচ্ছ্বসিত আগত দর্শনার্থীরা। জানা গেছে, এবারের ফুল উৎসবে ১২৭ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুল থাকবে। ১৫ প্রজাতির টিউলিপসহ দেশি-বিদেশি ফুলের দেখা মিলবে। মেলার পরও থাকবে একটি স্থায়ী বাগান; সেখানে বছরব্যাপী

ফুলের চাষ হবে। এ ছাড়া এবারের মেলায় একটি নৌকা জাদুঘর করা হচ্ছে; সেখানে ১৫টি নৌকা প্রদর্শন করা হবে। ১০০ শিল্পীর ১০০টি শিল্পকর্মও প্রদর্শন করা হবে; থাকবে সাম্পান বাইচ, সানসেট পয়েন্টসহ নানা আয়োজন।

প্রসঙ্গত, ফৌজদারহাট এলাকায় ১৯৪ একর জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। গত বছরের ৪ জানুয়ারি মাদকের আখড়া ও অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। তখন সেখানে একটি পার্ক তৈরির ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। পরের মাসেই আয়োজন করা হয় ১০ দিনের ফুল উৎসবের, যা ব্যাপক সাড়া ফেলে। সেই থেকে প্রতিবছর এ মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন।

ধীরে ধীরে ডিসি পার্ক আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে- এমন প্রত্যাশা পার্কের উদ্যোক্তা ডিসি আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, নগরীরবাসীর বিনোদনের জন্য ভালো কিছু করতেই এই পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। আগে এখানে মাদকের আখড়া ছিল। সেখানে এখন মানুষ ঘুরতে আসে। বিদেশে এ ধরনের মেলা প্রতিবছর হয়; আমরাও নিয়মিত করতে চাই। এতে দেশ-বিদেশের পর্যটককের আকর্ষণ বাড়বে।

আগে না গেলেও বর্তমানে প্রায় সময় ডিসি পার্কে ঘুরতে যান নগরীর পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে পরিবেশ ভালো ছিল না। তাই বাড়ির কাছে হলেও আসা হতো না; কিন্তু এখন সময় পেলেই ৩০ টাকায় টিকিট কেটে ঘুরে যাই। নানা রঙের ফুলের সুবার আর নির্মল বাতাসে এখনে স্বস্তির সময় কাটে।

ফুল উৎসব পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে ইফা ল্যান্ডস স্কিপ গার্ডেন ডিজাইন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কাউচার আল হোসাইন বলেন, দুই মাস আগে থেকেই উৎসবের জন্য ফুল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুল সংগ্রহ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্কে সাজানো হয়েছে। প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।