উদ্ধারকারী জাহাজের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

তাওহীদুল ইসলাম
২১ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
উদ্ধারকারী জাহাজের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা উদ্ধার প্রক্রিয়ায় দুটি পদ্ধতির ব্যবহার করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তমের ডুবে যাওয়া ফেরি উদ্ধারে সক্ষমতা না থাকায় আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে। সংস্থাটি আশা করছে, আজকের মধ্যে প্রত্যয় ফেরিটি উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। লিফটিং ও ফ্লোটিং এ দুই পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা আমাদের সময়কে বলেন, উদ্ধার তৎপরতা চলছে। বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনীর সদস্যরা এখানে কাজে সম্পৃক্ত। আশা করি দ্রুত ফেরিটি উদ্ধার হবে। এ ধরনের উদ্ধারকাজে সময় লাগে। কারণ ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে তার আশপাশের পরিবেশ ও জায়গা অনেক কিছু বিবেচনা করে বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ডুবে যাওয়া ফেরিটি অনেক পুরনো।

ঠিক কী কারণে সেটি ডুবেছে তা তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে। তবে এটি উদ্ধারে বেশ সময় লাগছে। এর আগেও উদ্ধার কাজে কয়েক দিন সময় পার হতে দেখা গেছে। এ কারণে নৌযানের উদ্ধার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডুবে যাওয়া ফেরির ওজন ২৫০ টন। মাটি, পানি ও যানবাহনসহ এর ওজন বর্তমানে ৩৫০ টনের বেশি হবে। কিন্তু জাহাজ রুস্তম, হামজা ও প্রত্যয়ের উদ্ধারের সক্ষমতা ২৫০ টন পর্যন্ত। এ কারণে কীভাবে দ্রুত উদ্ধার সম্ভব এমন আলোচনা সর্বত্র।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের (সিঅ্যান্ডপি) দায়িত্ব উদ্ধার তৎপরতা চালানো। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে প্রথমে দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ এনেও সফল হওয়া যায়নি। পরে যুক্ত হয়েছে প্রত্যয়। এখন জাহাজগুলো নোঙর করে কাজ চলছে। বেলুনের মাধ্যমে বাতাস ঢুকিয়ে এবং তার দিয়ে টেনে ওপরে তোলা এ দুই পদ্ধতিতে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বলা হয়েছে- এয়ার লিফটিং ব্যাগ ফেরির নিচে দিয়ে হাওয়ার মাধ্যমে ফেরিটিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পরই ফেরিটি টেনে তোলা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধারকারী জাহাজ হিসেবে রুস্তম ও হামজার পর ২০১৩ সালে যুক্ত হয় প্রত্যয় ও নির্ভীক। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের সড়ক ও রেল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন নৌপথের মাধ্যমে সার্বিক যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিআইডব্লিউটিসি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সংস্থাটির মাধ্যমে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি সড়কযান ফেরি দিয়ে পার করা হয়। সেই ফেরি ডুবে যাওয়া উদ্ধারের সক্ষমতা নিয়ে এখন আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। বর্তমান সরকার নৌযানের ব্যাপারে আন্তরিক। তাই উদ্ধারকারী জাহাজ ও উদ্ধার কার্যক্রমের সক্ষমতা আরও বাড়বে এমন আশা নৌ খাতের সংশ্লিষ্টদের।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, শুক্রবার আড়াইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছায় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। রজনীগন্ধা উদ্ধারে প্রথমে এয়ার লিফটিং ব্যাগ ডুবন্ত ফেরির নিচে স্থাপন করার চেষ্টা চলছে। পরে এয়ার লিফটিং ব্যাগে বাতাস ঢুকিয়ে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।

এর আগে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও হামজা ইতোমধ্যে তিনটি ট্রাক উদ্ধার করেছে। এখনো ফেরির ভেতর ৬টি ট্রাক রয়েছে। দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ূন কবীরের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পর ফেরিতে থাকা ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। উদ্ধার কাজে রয়েছে নৌবাহিনী, ফায়ারসার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল।

নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট শাহ পরান ইমন বলেন, নৌবাহিনীর ডুবুরি টিম, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর অর্ধশতাধিক ডুবুরি উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় পানিতে বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না।

গত মঙ্গলবার দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ৯টি ট্রাক নিয়ে ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা-৭ পাটুরিয়া ঘাটের কাছে ডুবে যায়।

কুষ্টিয়া থেকে ময়মনসিংহের ভালুকাগামী সুতা ভর্তি ট্রাকের মালিক মিজানুর রহমান জানান, ডুবে যাওয়া ফেরিতে তার তুলা ভর্তি ট্রাক ছিল। যার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। শনিবার (২০ জানুয়ারি) অর্ধেক তুলার বান্ডেলও উদ্ধার করা যায়নি।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেন মানিকগঞ্জ, শিবালয় ও গোয়ালন্দ প্রতিনিধি]