বাংলাদেশের হজের কোটা অর্ধেকও পূরণ হয়নি
চলতি বছর বাংলাদেশে হজ নিবন্ধনের কোটা পূরণ হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার সময় শেষ হয়ে গেলেও প্রায় ৭৫ হাজার জনের নিবন্ধন বাকি ছিল। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় আগামীতে বাংলাদেশের হজের কোটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শেষ হয় নিবন্ধনের সময়। হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৫২ হাজার ২৯১ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৮০২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৮ হাজার ৪৮৯ জন। এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার কোটা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। অর্থাৎ কোটা পূরণের বাকি রয়েছে ৭৫ হাজার।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার গতকাল রাতে দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘হজের আনুষ্ঠানিকতার জন্য সৌদি আরবে আমাদের বেশ কিছু কার্যক্রম নিতে হয়। এর সঙ্গে আমাদের হাজির সংখ্যাটা নিরূপণ করাটা জরুরি। সৌদি আরব আমাদের কাছে আগেই হাজির সংখ্যা জানতে চেয়েছে। কারণ ওখানে আমাদের হাজিদের থাকার জন্য বাড়িভাড়া করাসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নিতে হয়। এ বছর আর নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হচ্ছে না। যারা প্রকৃত হজে যেতে আগ্রহী, তারা ইতোমধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।’
কোটা কমে যাওয়ার আশঙ্কার ব্যাপারে সচিব বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমরা কূটনীতিক চ্যানেলে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একসময় অনেক হজযাত্রী পাওযা যেত, সে সময় কাকে রেখে কাকে সুযোগ দেব- এমন পরিস্থিতি ছিল। যে কারণে প্রাক-নিবন্ধনের
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আমার মনে হয়, আগামী বছর থেকে প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করে সরাসরি নিবন্ধন করা যেতে পারে। এমনকি একসঙ্গে হজের ব্যয়ও নিয়ে নেওয়া হবে, যেন নিবন্ধন নিয়ে সময়ক্ষেপণ না করতে হয়। বিশে^র বিভিন্ন দেশ কিন্তু একবারই হজের নিবন্ধন করে ফি নিয়ে নেয়। আমরাও সেটি করতে পারি।’
কোটা পূরণ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, তারা (হাব) বৈঠক করে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে জানাবেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে হজ নিবন্ধন শুরু হয়; চলে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রথম দফায় হজ নিবন্ধনের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
হজযাত্রী কমে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ‘সিটি নিয়ন ট্রাভেলস’-এর স্বত্বাধিকারী রেদওয়ান খান বোরহান বলেন, ‘হজযাত্রী কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ আছে। যেমন- হজ প্যাকের খরচ বেশি। আবার জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল। দেশে মানুষের আর্থিক সক্ষমতাও কমেছে। এ ছাড়া কোভিড মহামারীর দুই বছর যারা যেতে পারেননি, তাদের অনেকেই গত বছর হজে গিয়েছিলেন।’
জানা গেছে, হজযাত্রীদের ভাড়া কমানোর দাবিতে কোনো সাড়া মেলেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। হাব থেকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল। সরকারি নির্ধারিত এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকার পরিবর্তে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করার আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে একটি স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের আবেদন করা হয়।
এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার দুটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অপরদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। যদিও গত বছরের চেয়ে এ বছর সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ১ লাখ ৪ হাজার ১৬০ টাকা কমানো হয়েছে, তবুও বর্তমান হজ প্যাকেজের মূল্যকে অনেক বেশি মনে করছেন হজে যেতে আগ্রহীরা।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন