মুদ্রানীতির আগে আরও চড়া কলমানির সুদ

রেকর্ড ৯.৮ শতাংশে উঠেছে ।। আজ মুদ্রানীতি ঘোষণা

জিয়াদুল ইসলাম
১৭ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
মুদ্রানীতির আগে আরও চড়া কলমানির সুদ

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর ঘোষণা দেবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ জন্য বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে আরেক দফা বাড়ানো হতে পারে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার। আর নীতি সুদহার বাড়ানো হলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে। এদিকে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগেই আন্তঃব্যাংক কলমানির সুদের হার আরও চড়েছে। গতকাল এক দিনের ব্যবধানে কলমানি সুদ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেড়ে উঠেছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক মাসের ব্যবধানে কলমানি সুদ বেড়েছে প্রায় দশমিক ৪০ শতাংশ। কলমানির পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার টানা বাড়ছে। কয়েক দফা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে সব ধরনের সুদের হার বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সংকটের সময় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক, আবার ব্যাংক থেকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িক সময়ের জন্য টাকা ধার নেয়।

সাধারণত এক দিনের জন্য এই ধার নেওয়া হয়। এই ধার দেওয়া-নেওয়া কার্যক্রম যে ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয়, তা আন্তঃব্যাংক কলমানি বাজার নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ পলিসি রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদহার বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে আন্তঃব্যাংক কলমানিতেও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের শেষ দিকে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের খবর জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়। এর পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নিতে থাকেন গ্রাহকরা। আবার সেই সময় ব্যাংকগুলোতে নতুন আমানত আসাও কমে যায়। এতে ওই ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়, যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দেশে উচ্চমূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এতে জীবনযাত্রাঢ খরচ বেড়েছে। কিন্তু একই সময় মানুষের আয় খুব একটা বাড়েনি। আবার উচ্চমূল্যস্ফীতির সময়ে ব্যাংকে আমানতের সুদের হার যেভাবে বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়েনি। এতে ব্যাংকগুলো প্রত্যাশিত মাত্রায় আমানত পাচ্ছে না।

অন্যদিকে বিতরণ হওয়া ঋণ সময়মতো ফেরত না আসায় খেলাপি ঋণ দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। ফলে চলমান নগদ টাকার সংকট আরও বেড়েছে। আর এই সংকট সামাল দিতে আন্তঃব্যাংক কলমানির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে অনেক ব্যাংক। এতে কলমানির পাশাপাশি শর্ট নোটিশের সুদহারও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গতকাল আন্তঃব্যাংক কলমানিতে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদে ৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আর গড় সুদের হার উঠে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। আগের দিন সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। আর ওই দিন গড় সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এক মাস আগে গত ১৪ ডিসেম্বর কলমানিতে সর্বোচ্চ সুদ ছিল ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর গড় সুদ ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর পর থেকে টানা কলমানির সুদ বাড়ছে। আন্তঃব্যাংক কলমানির সঙ্গে শর্ট নোটিশে ধারের সুদের হারও বাড়ছে। গতকাল ২ থেকে ৯২ দিন মেয়াদি ধারের সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে।

এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে আজ বিকাল ৩টায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাজারে অর্থের জোগান আরও কমাতে নীতি সুদহার (রেপো হার) ২৫ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। আর নীতি সুদহার বাড়লে আন্তঃব্যাংক কলমানি, সরকারি বিল-বন্ড ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে। এ ছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দাম আরও বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা আসতে পারে। ডলারের দামে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন পদ্ধতি শিগগিরই চালুর ঘোষণা দিতে পারেন গভর্নর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো নতুন মুদ্রানীতিতেও চলমান থাকবে। তবে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বা টাকার প্রবাহ কমালেই মূল্যস্ফীতি কমে যাবে এমন সূত্র সব সময় কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ এর সঙ্গে নন-ইকোনমিক ফ্যাক্টরও (অর্থনৈতিক কারণ) জড়িত, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ নয়। এ ছাড়া এখনো ডলারের সংকট রয়েই গেছে। ফলে ক্রমাগত অবমূল্যায়ন হচ্ছে টাকার। এতে পণ্যের মূল্য সেভাবে কমানো যাচ্ছে না। তাই ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর ওপরও জোর দেওয়া হবে।