গণপরিবহনে সংরক্ষিত আসন ও কটুক্তি
গণপরিবহন মানেই হচ্ছে পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সমাজের সকল মানুষের পরিবহন। অথচ এই গণপরিবহনে নারীরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কয়েক বছর আগে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইডের এক গবেষণা রিপোর্টে জানা যায়, গণপরিবহনে শতকরা ৪১ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার। যৌন হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে শতকরা ৩১ ভাগ নারী গণপরিবহনে যাতায়াত বন্ধ করে দেন, যা নারীদের কর্ম, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কিছু কিছু বাসে ‘মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন’ কথাটি লেখা থাকলেও বর্তমানে যে সংখ্যক নারী পরিবহনে যাতায়াত করেন সে তুলনায় নারীদের জন্য মাত্র ৯টি আসন মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এ বিষয় ঢাবির ইংরেজি বিভাগের সাবেক ছাত্রী সানিয়া বলেন- তিনি যখন ঢাবির স্টুডেন্ট ছিলেন তখন ছাত্র-ছাত্রী যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত পরিবহনের বাসটিতে সিট বরাদ্দ সিস্টেম ছিল হাফ সিট নারীর আর হাফ সিট পুরুষের। দাঁড়িয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সামনের দিকে ছাত্রীদের আর পেছনের দিকে ছাত্রদের জন্য। ঢাকার রাস্তায় বিআরটিসির একটি মাত্র বাস নারীদের পরিবহনের জন্য চালু রয়েছে ‘দোলনচাঁপা’। তার মতে, যেহেতু গণপরিবহনে নারীযাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে তাই এখনই সময় নারীদের যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনে আসনসংখ্যা বাড়ানো অথবা সমান ভাগ করাটাও আবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে।
সকাল ৮টায় মিরপুর থেকে উত্তরা রুটের বাস ধরতে গেলে অফিস টাইম হওয়াতে দাঁড়িয়ে যেতে চাইলেও বাসের কনডাক্টর কোনোভাবেই নারী নিতে রাজি হন না, গেটও খোলেন না। এই রুটের বাসগুলোতে সংরক্ষিত আসন শুধু নামমাত্রই লেখা আছে, সেটি কার্যকর নয়। নারীরা এখানে নিজেদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসার সুযোগই পান না। কেউ কালেভদ্রে সংরক্ষিত আসনের কথা বলতে গেলেই পুরো বাসের পুরুষযাত্রী যেন খেপে ফুঁসে ওঠেন। তারা দাঁড়িয়ে যেতে পারলে নারী কেন পারবেন না, সমঅধিকারের বিষয় টেনে আনেন কটুকথা শোনান- জানালেন কর্মজীবী নারী তামান্না।
আরও পড়ুন:
বিশেষজ্ঞ যা বলেন
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৬ নম্বর বাসে যাতায়াত করেন শাহনাজ। তিনি বলেন, বাসের স্টাফরাই সংরক্ষিত সিট খালি রাখেন বা খালিও করে দেন; কিন্তু মাঝেমধ্যেই খালি সিটে পুরুষযাত্রী বসলে উঠে যেতে বললেই ঝগড়াঝাটি শুরু করেন। তাদের কথা হচ্ছে- জেনারেল সিটে নারী যেতে পারলে কেন মহিলা সিটে তারা বসতে পারবেন না। নারী যাত্রীদের সংরক্ষিত আসন বাড়ানো হোক অথবা আলাদা বাস চালু করা হোক। এ ছাড়া নারী যাত্রীদের যাত্রাপথে ভোগান্তি কমবে না। ২০২২ সালের অক্টোবরে ‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি’র আওতায় সরকারের অর্থায়নে গণপরিবহনে সিসি টিভি স্থাপন উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, সিসি টিভি স্থাপনের মাধ্যমে গণপরিবহন নারীবান্ধব ও নিরাপদ হবে, তারা বাসে উঠতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। নারীরা ৯৯৯ ও ১০৯-এর মাধ্যমেও অভিযোগ জানাতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
কোনো বাধাই দমাতে পারেনি জান্নাতুলকে