জাপায় ‘হযবরল’ অবস্থা, চ্যালেঞ্জে কাদের-চুন্নু
নাটকীয়তা শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিজয়ী সংসদ সদস্যরা শপথগ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার আশা প্রকাশ করেছেন। তবে এরই মধ্যে নির্বাচনে ভরাডুবির কারণে দলের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবি উঠেছে। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কাদের-চুন্নুর নেতৃত্ব।
জানা গেছে, জিএম কাদের ও চুন্নুর পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার রাতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন দলের নেতাদের একাংশ। বনানীতে চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হন বনানী কার্যালয়ের সামনে। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিলেও নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান। নেতৃবৃন্দের ভাষ্য- দলকে নির্বাচনমুখী করে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। পরে প্রার্থীদের কোনো খোঁজখবর নেননি চেয়ারম্যান ও মহাসচিব। সেই সঙ্গে সমঝোতার আসনে জাপার গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাদ পড়াতেও ক্ষোভ রয়েছে। এদিকে রওশন এরশাদ, শাদ এরশাদ, মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ অনেকেই মনোনয়ন পাননি। তারা জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ চাওয়ার পাশাপাশি দলটির সম্মেলনের দিকে এগোচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল আপনারা জেনেছেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর কোনো বিকল্প ছিল না। তবে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে পারলে ভালো হতো।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। জাতীয় পার্টির যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তার সঙ্গে প্রার্থী মনোনয়ন প্রশ্নে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু তিনি পার্টিকে বিভক্তি করতে দেননি। অথচ পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত চার বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং অদক্ষতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম- জাতীয় পার্টিকে এতটা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেওয়া ও নির্বাচনে ভরাডুবির দায়িত্ব নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব পদত্যাগ করে তাদের সম্মান রক্ষা করবেন। কিন্তু সে বোধদয়ও তাদের হয়নি। আমরা পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোভাব জানতে পেরেছি। এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করা এবং পার্টির ঐক্য বজায় রাখার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়ন দানে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ কেলেঙ্কারি এবং ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এ অতিরিক্ত মহাসচিব বলেন, ‘দলের যেসব প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, আগামীতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। এই মুহূর্তে পার্টিকে সুসংগঠিত করে একটি জাতীয় সম্মেলন করাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।’
জানা গেছে, এ বিষয়ের সঙ্গে একমত জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ফখরুল ইমাম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, এমরান হোসেন মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, বেলাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন আশরাফ, সাইফুল ইসলাম, সৈয়দ ইফতেখার আহসান, মিজানুর রহমান মিরু প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘চেয়ারম্যান আর মহাসচিব এককভাবে দল পরিচালনা করছেন। তারা কর্মীবান্ধব নেতা নন। তাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি বিকশিত হতে পারে না।’ লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, তাদের অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে জাতীয় পার্টি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দলের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার তাদের নেই।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, তারা বিরোধী দলে ছিলেন এবং বিরোধী দলেই থাকতে চান। এর আগে দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত ১১ সংসদ সদস্যকে শপথ পড়ান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শপথ নিতে সংসদ ভবনে হাজির হন ভোটে জয়ী জাতীয় পার্টির ১১ সদস্য। রংপুর সদর-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য জিএম কাদের বলেন, সংসদে আসার বিষয়টি তার জন্য সবসময়ই ‘আনন্দের’। তিনি বলেন, ‘সংসদে আসার অনুভূতি সবসময়ই ভালো। সেদিক দিয়ে বলতে গেলে আবার সংসদে আসলাম সেটি আনন্দের বিষয়।’
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম